অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
শেষ মুহূর্তের গোলে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছ থেকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল এটিকে মোহনবাগানের বিদেশি মিডফিল্ডার জনি কাউকো। শনিবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে সাত মিনিটের স্টপেজ টাইমের একেবারে শেষ মিনিটে গোল করে সমতা আনেন ফিনল্যান্ডের ইউরো দলের সদস্য। তাঁর এই গোলেই প্রায় হারা ম্যাচ ২-২-এ ড্র করে এক পয়েন্ট অর্জন করে সবুজ মেরুন বাহিনী।
শনিবার দুই দলের মধ্যে প্রায় সমানে সমানে লড়াই হয়। চলতি হিরো আইএসএলে সম্ভবত সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের আট মিনিটের মধ্যেই দু’পক্ষ একটি গোল করে ফেলে। সাত মিনিটের মাথায় আদ্রিয়ান লুনার ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ গোলের পরেই ডেভিড উইলিয়ামস সমতা আনেন। দ্বিতীয়ার্ধে সেই লুনাই ফের তার দ্বিতীয় গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন এবং ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারাই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু খেলার শেষ বাঁশি পড়ার পড়ার কয়েক সেকেন্ড আগে অনবদ্য গোল করে কাউকে দলের হার বাঁচান। এই ড্রয়ের ফলে দুই দলই সেরা চারে রয়ে গেল। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচের (হায়দরাবাদ এফসি বনাম এফসি গোয়া) পর বোঝা যাবে, কোন দল কত নম্বরে থাকবে।
এ দিন এটিকে মোহনবাগানের চোট-তালিকা থেকে অনেককেই প্রথম এগারোয় দেখা যায়। ডেভিড উইলিয়ামস, কার্ল ম্যাকহিউ এ দিন শুরু থেকেই মাঠে নামেন। হুগো বুমৌস ও রয় কৃষ্ণা রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে পরে নামেন।
শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তোলে কেরালার দল এবং ম্যাচের সাত মিনিটের মধ্যেই আদ্রিয়ান লুনার অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় তারা। বিপজ্জনক জায়গায় পাওয়া ফ্রি কিক থেকে লুনা মাপা শটে গোলের বাঁদিকের কোণ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন। অসাধারণ এই শট থেকে উড়ে আসা বল অনুসরণ করে আটকানোর সুযোগই পাননি এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপার অমরিন্দর।
তবে পরের মিনিটেই সমতা নিয়ে আসেন ডেভিড উইলিয়ামস। ডান দিকের উইং দিয়ে উঠে তাঁকে গোলের সামনে ক্রস দেন প্রীতম কোটাল, যা থেকে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ডেভিড। দুই দলই গোল করার পরে ফের শূন্য থেকে শুরু হয় ম্যাচটা। দুই দলই ম্যাচের দখল নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। ১৫ মিনিটের মাথায় লেনি রড্রিগেজের শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ২৩ মিনিটের মাথায় জর্জ দিয়াজের গোলমুখী শট অমরিন্দরের হাতে লেগে গোলের বাইরে বেরিয়ে যায়।
৩৪ মিনিটের মাথায় আলভারো ভাস্কেজ নিজেদের অঞ্চলেই ভুল করে ডেভিড উইলিয়ামসের পায়ে বল তুলে দেওয়ায় ডেভিড তা দেন লিস্টন কোলাসোকে। তিনি কোণাকুনি দৌড়ে সোজা গোলে শট নেন, যা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে সেই আটকে দেন গোলকিপার প্রভসুখন। ফিরতি বলে ফের শট নেন তিনি এবং সেই বল ব্লক হয়ে যায়।
৩৯ মিনিটের মাথায় পুইতিয়া দলকে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রায় এগিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া তাঁর শট বারে লেগে অমরিন্দরের হাতে লেগে গোলের ওপর দিয়ে চলে যায় কর্নারের জন্য। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে দিয়াজের পাস থেকে ভাস্কেজ গোলের উদ্দেশ্যে শট নিলেও তা অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। শেষ মিনিটে প্রথমার্ধে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। বল পজেশন ছিল যেমন প্রায় সমান সমান, তেমনই দুই পক্ষই গোলে একটি করে শট নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধে ডেভিড উইলিয়ামসের জায়গায় হুগো বুমৌসকে নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো। মাঝমাঠ থেকে যাতে আরও ভাল গোলের বল সাপ্লাই হয়, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তাতে ম্যাচ আরও জমে ওঠে। তবে কাজের কাজটা ফের করে ফেলেন সেই লুনা।
৬৪ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের ডানদিকের কোণ থেকে নেওয়া মাপা নিখুঁত শটে গোলের ডানদিক দিয়ে বল ঢুকিয়ে দেন। পেরেইরা দিয়াজের কর্নার থেকে পুইতিয়ার পা হয়ে বলটি আসে লুনার কাছে। এর আগেই দিয়াজের দু’টি গোলমুখী শট বাঁচান অমরিন্দর ও একবার প্রভসুখনেরও পরীক্ষা নেন মনবীর।
৭২ মিনিটের মাথায় কার্ল ম্যাকহিউয়ের জায়গায় মাঠে নামেন রয় কৃষ্ণা। অন্য দিকে কিছুক্ষণ পরেই সাহাল আব্দুল সামাদকে বসিয়ে প্রশান্তকে নামায় কেরালা। লেনির জায়গায় কিয়ান নাসিরিকেও নামায় এটিকে মোহনবাগান। প্রীতমের জায়গায় নামানো হয় প্রবীরকেও। কিন্তু কোনও পরিবর্তনেই কাজ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা। ক্রমশ নিজেদের গোলের মুখ আঁটোসাঁটো করতে শুরু করে ফেলে কেরালা। ৯০ মিনিটের মাথাতেই বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়ে যান মনবীর, তাঁর শট বাঁচিয়ে নেন প্রভসুখন। ফিরতি বলে কিয়ান শট নিলে তা ব্লক করে দেন হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা।
স্টপেজ টাইমের সাত মিনিটে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে। ভাস্কেজের ক্রস থেকে ভিনসি ব্যারেটো গোলে শট নিলে তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। সন্দেশ ঝিঙ্গনের গোলমুখী হেড আটকে দেন ব্লাস্টার্সের গোলকিপার। প্রবীর দাসকে লুনা জার্সি ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দিলেও লাল কার্ড দেখতে হয় প্রবীরকেই। প্রবীর অবশ্য আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া দেখান। রেফারির আচমকা সিদ্ধান্তে দশ জন হয়ে যাওয়ার পর যেন হঠাৎ জ্বলে ওঠে এটিকে মোহনবাগান এবং ঠিক তখনই বিপক্ষের দুই পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার গোলটি করেন কাউকো।
হুগো বুমৌস গোলটি প্রায় সাজিয়ে দেন কাউকোর পায়ে। বক্সের মাথা থেকে তা সোজা গোলে মারেন ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার। প্রভসুখন গিল বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বলে আঙুল ছোঁয়ালেও তা আটকাতে পারেননি।