অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো এটিকে মোহনবাগানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে জয়ের রাস্তায় ফিরে এসেছে দল। প্রথম চারেও ঢুকে পড়েছে। বুধবার হায়দ্রাবাদ এফসি-কে হারাতে পারলে পৌঁছে যাবে লিগ টেবলের শীর্ষে। ফেরান্দোর ফুটবল স্টাইল ও দর্শনে যে তাঁর দলের খেলোয়াড়রা সাড়া দিচ্ছেন, তা প্রথম দুই ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবু স্প্যানিশ কোচ বলছেন, তাঁর স্টাইলে নিখুঁত ফুটবল খেলতে দলের আরও সময় লাগবে। দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুশি ফেরান্দো হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধেও জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী। তবে স্বীকার করে নিলেন, ওগবেচেরা প্রতিপক্ষ হিসেবে যথেষ্ট শক্তিশালী। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে কী বললেন, জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যোগ দেওয়ার পরে দল পরপর দুটো ম্যাচ জিতলেও ‘ক্লিন শিট’ রাখতে পারেনি। ডিফেন্স নিয়ে কি সমস্যা আছে?
উত্তরঃ না, সত্যি বলতে আমি ম্যাচ জেতা নিয়ে বেশি ভাবছি। কারণ, তিন পয়েন্ট পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এতেই দলের ও ক্লাবের পক্ষে ভাল। আমাদের খেলার স্টাইল সম্পর্কে জানাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যার ভিত্তিতে আমরা পরিকল্পনা করি। আমাদের ছেলেরা জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, এটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওদের সময় দিতে হবে। আমাদের স্টাইল ও দর্শন খুব একটা সহজ নয়। ওদের পক্ষে এটা বোঝা খুব একটা সোজা নয়। তবে ওরা যে এটা বোঝার চেষ্টা করছে, সে জন্য আমি খুশি। যত দিন যাবে, ওদের কাছে ব্যাপারটা সড়গড় হয়ে উঠবে।
হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
উত্তরঃ আমার মনে হয় দুর্দান্ত একটা ম্যাচ হবে। কারণ, হায়দ্রাবাদের স্টাইল দারুণ। ওদের দলও খুব ভাল। ওদের দলটাও খুবই ভাল। ওরা ভাল ফুটবল খেলতে চায়। প্রতি ম্যাচে একই স্টাইলে খেলে না। আশা করি, ভাল একটা ম্যাচ দেখতে পাবেন।
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কী বলবেন? তাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে।
উত্তরঃ ওরা শক্তিশালী দল। ওদের সেন্টার ব্যাক, রাইট ও লেফট ব্যাক বেশ ভাল। অ্যাটাকাররাও একশো শতাংশ ভাল ফর্মে আছে। জোয়াও (ভিক্টর) মাঝ মাঠে দলটাকে দারুণ নিয়ন্ত্রণ করে। এডু গার্সিয়া দশ নম্বর হিসেবে খুবই ভাল। আক্রমণের সময় অনেক জায়গা তৈরি করে। ওগবেচে তো দুর্দান্ত।
দু’বছর আগে প্রবীর দাস ও মাইকেল সুসাইরাজ উইং ব্যাক হিসেবে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। এই মরশুমে কি ওদের প্রথম দলে ফের দেখা যেতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই দেখা যেতে পারে। তবে আমার কাছে পারফরম্যান্সই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চোট সারিয়ে আসার পরে রিকভারির প্রক্রিয়াও একটা থাকে। সেটা ঠিকঠাক হওয়ার পরে পারফরম্যান্স একশো শতাংশ হয়। এটা খেলোয়াড়দের পক্ষেই ভাল।
গত ম্যাচে চোট পাওয়া শুভাশিস কি এই ম্যাচের জন্য ফিট হয়ে উঠেছেন? আর কোনও চোট সমস্যা আছে আপনার দলে?
উত্তরঃ না, শুভাশিসের এখনও একই অবস্থা। আমার ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে। কারণ, ও খুব ভাল খেলোয়াড়। এখন ওকে সাহায্য করতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই রিকভারি প্রসেস পেরিয়ে ফিরে আসতে হয়। ওকেও তাই করতে হবে। আরও কয়েকজন খেলোয়াড়ের কিছু না কিছু সমস্যা আছে। ওদের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
কাল জিতলে আপনারা এক নম্বরে চলে যাবেন। জয়ের হ্যাটট্রিকও হবে। এই ম্যাচটা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের ক্লাব ও দলের কাছে এবং ফুটবলারদের কাছে একটা বড় সুযোগ। মাত্র দুই সপ্তাহে দলের ছেলেরা এই জায়গায় চলে এসেছে। ফুটবলারদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা তাদের কাজের পুরস্কার। ম্যাচের পরে লিগ টেবল দেখে ফ্যানরা নিশ্চয়ই খুশি হবেন।
আপনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম এগারোয় জনি কাউকোকে দেখা যায়নি। ওঁর সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?
উত্তরঃ জনি কাউকো অসাধারণ পেশাদার ফুটবলার। এই ধরণের খেলোয়াড়দের আমার খুবই ভাল লাগে। ও প্রথম এগারোয় নেই ঠিকই, কিন্তু ও মাঠে থাকে, পরিশ্রম করে। আমাদের স্টাইলের সঙ্গেও মানিয়ে নিয়েছে। দলকে সাহায্য করতে চায়। চরম পেশাদার খেলোয়াড়। ম্যাচের পরের দিনই ওকে প্রথম অনুশীলনে পাওয়া যায়। উইলির (উইলিয়ামস) মতো। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ও সব সময় তৈরি থাকে। দলের ওকে যখনই প্রয়োজন হয়, ও তখন একশো শতাংশ দিতে তৈরি থাকে।
গত দুই ম্যাচে অমরিন্দরকে সেরা ছন্দে দেখা যায়নি এবং অভিলাষ পালকেও এখনও পরখ করে দেখা হয়নি। গোলকিপিং নিয়ে কি আপনি চিন্তিত?
উত্তরঃ না না, একেবারেই না। প্রি সিজনে ওরা খুব ভাল করেছে। ২০ ম্যাচের লিগে বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন রকমের খেলা দেখা যায়। কিপারদের পরখ করে দেখাই যায়। কিন্তু সব সময় সেটা সম্ভব হয় না। কারণ, মাঠে একজন কিপারই রাখা সম্ভব। তবে আমি গোলকিপিং নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই। কারণ, অমরিন্দর, অর্শ ও অভিলাষের ওপর আমার একশো শতাংশ আস্থা রয়েছে।
মনবীর সিংও গত কয়েক ম্যাচ ধরে গোল পাচ্ছেন না। ওঁর সম্পর্কে কী ধারণা আপনার?
উত্তরঃ আমার মনে হয় ওর পারফরম্যান্স ভাল। তবে ওকে আক্রমণের ক্ষেত্রে টাইমিংটা আরও ভাল বুঝতে হবে। তবে ওকে নিয়ে চিন্তিত নই। ও পরিশ্রম করছে। ধাপে ধাপে উন্নতি করছে। আমি ওকে সাহায্য করতে চাই, যাতে ও আক্রমণের শেষটা নিখুঁত ভাবে করতে পারে।
দল প্রচুর গোল খাচ্ছে বলে ফ্যানরা উদ্বিগ্ন। তাঁদের কী বলবেন?
উত্তরঃ কোনও চিন্তা নেই। ফুটবল এ রকমই। তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আক্রমণে আমাদের মানসিকতা নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। আক্রমণে উঠতে গিয়ে মাঝে মাঝে গোল খেতে হচ্ছে ঠিকই। তবে চিন্তার কিছু নেই। আমাদের স্টাইল, আমাদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, এগুলো উপভোগ করুন। দিনের শেষে তিন পয়েন্ট তোলাটাই আসল কথা।
শেষ প্রশ্ন, আপনার ফুটবল দর্শন হল আক্রমণাত্মক ফুটবল। কালকের ম্যাচে কি একটু বেশিই আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যাবে আপনার দলকে?
উত্তরঃ আমাদের উন্নতি করতে হবে। পজেশনাল অ্যাটাকে আরও নিখুঁত হতে হবে। তবে মাত্র দু’সপ্তাহ কাজ করে এই স্টাইলে নিখুঁত খেলা কঠিন। তবে আমি চাই আমাদের সমর্থকেরা বুঝুন, আমাদের ফুটবলাররা কত ভাল ও কত পরিশ্রমী। তাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য তারা উন্নতি করতে কতটা মরিয়া।