শীতলকুচিতে ভোট-পরবর্তী হিংসায় যুক্ত দোষীদের খোঁজে পুরস্কার ঘোষণা সিবিআইয়ের

এনএফবি, কোচবিহারঃ

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় ১০ মাসের অধিক সময় কেটে গেলেও সন্ধান মেলেনি শীতলকুচিতে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের। এবার তাঁদের সন্ধান পেতে শীতলকুচি ব্লকের দুটি খুনের ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করল সিবিআই। অভিযুক্তদের ছবি ও নাম লিফলেটে ছাপিয়ে বিলি করার ঘটনায় বুধবার রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় শীতলকুচি বাজার ও পাটানটুলি গ্রামে। স্থানীয়রাও কৌতুহলী চোখ নিয়ে সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসাত্মক ঘটনাগুলির তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিবিআই। শীতলকুচি ব্লকের তিনটি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যে দুটি মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে তারা। একটি খুনের ঘটনায় আদালতে চার্জশিট জমা করেছে সিবিআই।

আরও পড়ুনঃ বংশীহারীতে গুলিবিদ্ধ ফিনান্স কর্মী
এদিকে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের মামলায় বিগত ৬ মাস ধরে কোচবিহারের গোপালপুরে বিএসএফ ক্যাম্পে ঘাঁটি গেড়ে বসলেও নাগাল মেলেনি অভিযুক্তদের। অধিকাংশই বর্তমানে পলাতক। শীতলকুচি ব্লকের নওদা বস বুথে ভোট পরবর্তী হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন মানিক মৈত্র নামে এক যুবক। যুবকের স্ত্রী আলপনা মৈত্র শীতলকুচি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনায় তদন্ত নেমে বেশ কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকের নামে মাথাভাঙ্গা মহকুমা আদালতে চার্জশিট জমা করে সিবিআই। চার্জশিটে নাম থাকা মদন বর্মন, রবীন্দ্র বর্মন ও তাহিদুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। বাকি তিন অভিযুক্ত পলাতক।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এই ঘটনায় আদালতে জমা করতে পারে সিবিআই। গত সপ্তাহে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের শীতলকুচি ব্লকের সহ-সভাপতি সহ ৭ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে। তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে সিবিআই। এরপর মাথাভাঙ্গা মহকুমা আদালতে ৭ জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন। তবে এবার প্রথম চার্জশিটে নাম থাকা নব কুমার বর্মন আর শ্যামল বর্মনের সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কৃত করবে সিবিআই। বিধানসভা ভোটে চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণের দিন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে শীতলকুচি ব্লকের পাঠানটুলি গ্রামের বিজেপি সমর্থক আনন্দ বর্মন খুন হন। খুনের তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
তবে এ ঘটনায় পুলিশ একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও সিবিআই কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সিবিআই তদন্তের সাতজন অভিযুক্তের নাম উঠে আসে। অভিযুক্তদের নাম হাকিম মিয়া, করিম মিয়া, বুলু মিয়া, দিনেশ্বর বর্মন, নিত্যানন্দ বর্মন ও সুভাষ বর্মন, এই ৭ অভিযুক্তের ছবি ও নাম ছাপিয়ে শীতলকুচি বাজার ও পাঠানটুলি গ্রামে বিলি করল সিবিআই। সিবিআই এখনও চার্জশিট জমা করে নি।

আরও পড়ুনঃসর্বদলীয় বৈঠক মাথাভাঙ্গায়
সিবিআই -এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের খোঁজ দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন। এমনকি গোপন রাখা হবে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয়। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায় শীতলকুচি ও পাঠানটুলি এলাকায়। ইতিমধ্যে লিফলেটে নাম ও ছবি সিবিআই এর টেলিফোন নাম্বার দেওয়া রয়েছে। অনেকের মুখে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে ছবিগুলো মোবাইলে ফটো করে রেখে দেওয়া হবে এবং যদি কারো একজনের সন্ধান মেলে তাহলেই ৫০ হাজার টাকা হাতের মুঠোয় চলে আসবে। এই প্রথম কোনো খুনের ঘটনায় মাথাভাঙ্গা মহকুমা শীতলকুচিতে ভোট-পরবর্তী হিংসার তদন্তে, লিফলেট বিলি ও অভিযুক্তদের খোঁজে পুরস্কার ঘোষণা করল সিবিআই।
অপরদিকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ১০ এপ্রিল ভোটের দিন শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের ৫/১২৬ নাম্বার বুথে চারজন খুন হন। সেই খুনের কিনারা কি হলো তা অনেকেই জানতে চাইছে।