প্রথা মেনে আজও নিজের বিরামভোগ নিজেই রান্না করেন দেবী কনকদুর্গা

এনএফবি,ঝাড়গ্রামঃ

নিজের ভোগ নিজেই রান্না করেন দেবী কনকদুর্গা। এমনটাই প্রচলিত বিশ্বাস। জামবনী ব্লকের চিল্কিগড়ের ডুলুং নদীর ধারে রয়েছে দেবী কনকদুর্গার মন্দির। নীলবস্ত্র পরিহিতা, চর্তুভুজা এই দেবী খুবই জাগ্রত। মহানবমীর দিন অন্নভোগের আগে দেবীকে নিবেদন করা হয় ‘বিরাম ভোগ’। অষ্টমীর গভীর রাতে একটি পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। ওই নিশাবলির মাংসই হল ‘বিরাম ভোগ’। জনশ্রুতি, এই ‘বিরাম ভোগ’ রান্না করেন স্বয়ং দেবী কনকদুর্গা নিজেই।

জামবনী পরগনার সামন্তরাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ-এর রাজধানী ও প্রাসাদ ছিল চিল্কিগড়ে। এখনও সেই রাজপ্রাসাদ আছে। দেবীর স্বপ্নাদেশে রাজা এক রানির গয়না দিয়ে তৈরি করালেন অষ্টধাতুর দেবী কনক দুর্গার মূর্তি। গভীর জঙ্গলের মধ্যে ডুলুং নদীর ধারে ১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দে (১১৫৬ বঙ্গাব্দে) আশ্বিন মাসের শুক্লা সপ্তমী অর্থাৎ শারদীয়া দুর্গা সপ্তমীর দিনে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। সেই থেকে দেবীর নিত্যপুজো চলছে আজও। দেবীকে প্রসন্ন করার জন্য রাজা নরবলী প্রথা বন্ধ করে ‘বিরাম ভোগ’ চালু করেন। মন্দিরের পূজারি আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গী ও গৌতম ষড়ঙ্গী বলেন, মহাষ্টমীর রাতে মন্দিরের সামনে পাতাল কুয়োর কাছে জঙ্গলে একটি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। তবে বলি হাঁড়িকাঠে দেওয়া হয় না। আগে পাতাল কুয়োর মধ্যেই নরবলি দেওয়া ধড় ও মুন্ড ফেলা হত। সেই প্রথা বন্ধ হওয়ার পরে নিশাবলি রাতে বলি দেওয়া পাঁঠার মাংসে নুন-মশলা-গাওয়া ঘি মিশিয়ে একটি নতুন মাটির হাঁড়ির মধ্যে মুখ বেঁধে রাখা হয়। হাঁড়ির গায়ে সিঁদুর দিয়ে বীজমন্ত্র লেখেন পূজারি। তারপর বিরাম ঘরে ওই মাংস ভর্তি পাত্রটি কাঠ-কয়লার আঁচে চাপানো হয়। একটি পিতলের খুন্তি হাঁড়ির উপরে আড়াআড়ি রেখে দুর্গার বীজ মন্ত্র জপ করে ওই ঘরে তালা লাগিয়ে দেন পূজারি। সেই রাতেই চাবি রাজবংশের প্রতিনিধি নিয়ে চলে যান। বিশ্বাস, সেই রাতেই সারা রাত ধরে ‘বিরাম ভোগ’ রান্না করেন দেবী। মহনবমীর দুপুরে চন্ডী হোমের পরে ছাগল-মোষ বলি হয়। মহানবমীর দিন প্রচুর ভিড় হয় চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দিরে।