মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
এবার মাধ্যমিকে কোচবিহার জেলায় একাই কাঁপাল দিনহাটা গোপালনগর এমএসএস হাইস্কুল। জেলায় প্রথম দশে থাকা ১৩ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে গোপালনগর এমএসএস হাইস্কুলের ৬ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এরমধ্যে গোপাল নগর এমএসএস হাইস্কুল থেকে ৬৮৯ নম্বর পেয়ে পঞ্চম হয়েছে দেবদত্ত কুণ্ডু এবং শুভজিৎ সাহা। মাথাভাঙা হাইস্কুল থেকে আরমান ইস্তেহার আলি এবং মাথাভাঙা গার্লস হাইস্কুল থেকে আর্জিনি সাহাও একই নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থান দখল করেছে। জেলায় এরাই সম্ভাব্য প্রথম।
এছাড়াও ৬৮৭ নম্বর পেয়ে দিনহাটা গোপালনগর এমএসএস হাইস্কুল থেকে সপ্তম স্থান পেয়েছে অনন্য দে ও সৃজিতা মজুমদার। দিনহাটার ওই স্কুল থেকেই ৬৮৬ পেয়ে অষ্টম স্থান দখল করেছে রনি বর্মণ। ওই একই স্কুল থেকে ৬৮৪ নম্বর দশম স্থান দখল করেছে সায়ন্তিকা বর্মণ।
গোপাল নগর এমএসএস হাইস্কুলের এমন ভালো রেজাল্টে খুশি এলাকার শিক্ষাপ্রেমী মানুষ থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা। এদিন ওই স্কুলের এমন ভালো ফলাফলের কথা সকালে জানতে পেরেই স্থানীয় বিধায়ক উদয়ন গুহ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরি শঙ্কর মাহেশ্বরী কাউন্সিলার পার্থনাথ সরকার সফল ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন। গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ প্রতিমও রায়ও। সফল ছাত্রছাত্রীদের হাতে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে সম্বর্ধনা জানিয়েছেন।
উদয়ন বাবু বলেন, “দিনহাটা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে বরাবর ভালো ফলাফল করে থাকে। এবার আরও ভাল ফল হয়েছে। আমরা চাইব ভবিষ্যতে ওরা আরও ভাল ফল করুক। দিনহাটা এবং বাংলার মুখ উজ্জ্বল করুক।” ওই এলাকার কোন মেধাবী ছাত্রছাত্রী আর্থিক সমস্যায় পড়ে লেখাপড়া বন্ধ হবে না। কোন ভাবে কেউ সমস্যায় পড়েছে জানতে পারলেই তার পাশে দাঁড়ানো হবে বলেও এদিন উদয়ন বাবু আশ্বাস দিয়েছেন।
পার্থ প্রতিম রায় বলেন, “কোচবিহার জেলায় ১৩ জন মেধা তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে গোপালনগর হাইস্কুলের ৬ জন। এটা আমাদের শিক্ষক সমাজের কাছে অনেক বেশী গৌরবের। এই মুহূর্তে দিনহাটা গোপালনগর হাইস্কুলের সপ্তম স্থান পাওয়া সৃজিতা মজুমদারের বাড়িতে রয়েছি। ওর বাবা মা দুজনেই শিক্ষক। জেলায় ১৩ জনের মধ্যে দিনহাটা ছাড়াও মাথাভাঙ্গায় ৪ জন, তুফানগঞ্জে এবং কোচবিহারে ১ জন প্রথম দশে রয়েছে। এরা ভবিষ্যতে আমাদের আরও বেশী গৌরবান্বিত করবে। এটাই আশা করি।”
গোপাল নগর এমএসএস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্কাস আলি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের কঠিন অধ্যাবসয়, শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমন্বয়, অভিভাবকদের প্রচেষ্টা সব মিলয়ে এটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের স্কুল শুধু এবার নয়, গতবারও ৪ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিল। করোনার সময় লকডাউন শুরু হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে অনলাইন ক্লাস নেওয়া, অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া এবং পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন করে ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে আলোচনাও করা হয়েছিল। আগামীতে যাতে আরও ভালো ফল করা যায় সেটাই আমরা আবার নতুন করে শপথ নেব।”
দিনহাটা নিগমনগর হাইস্কুলের সপ্তম স্থান পাওয়া সৃজিতা দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লেখা পড়া করত। তাঁর ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে। লেখাপড়া ছাড়াও নাচ ও ছবি আঁকতে ভালবাসে সৃজিতা। ওই স্কুলের অষ্টম স্থান পাওয়া রনি বর্মণের প্রত্যেক বিষয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষক ছিল। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশুনা করতো সে। ক্রিকেট প্রিয় রনির কথায়, “প্রত্যাশামত রেজাল্ট হয়েছে। ভবিষ্যৎ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।”
দশম স্থান পাওয়া সায়ন্তিকা বর্মণের কথায়, টেস্টে রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিল। তারপর থেকে পড়ায় জোড় দিয়েছিলাম। পাঠ্য বইকে গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। স্পিড বাড়ানোর জন্য টেক্সট পেপারটা বারবার করেছি। পরীক্ষার পর ভাল ফল হবে এটা আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রথম দশের মধ্যে থাকবো ভাবতে পারি নি।”