এনএফবি, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে দুটো হাত। কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত জড়ানো হয়েছে সেলোটেপ। মুখে মাখানো হয়েছে কালি। আর ওভাবেই ১৫বছরের এক কিশোরকে ঘোরানো হল গোটা এলাকা। কিন্তু ঠিক কি উদ্দেশ্যে? এলাকার অনেকেরই প্রশ্ন, ছেলেটি চুরি করেছে নাকি? উত্তর ভেসে আসছে, আজ ওর জন্মদিন। আমরা জন্মদিন পালনে বেরিয়েছি। এরকম ‘অভিনব’ উপায়ে জন্মদিন পালন দেখে তাজ্জব এলাকার বাসিন্দারা।
শনিবার ১৫তম জন্মদিন ছিল মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের। ওই ছাত্রের বাড়ি শহরেরই বৈশাল কলোনী এলাকায়। শনিবার জন্মদিনের ‘সারপ্রাইস’ দেবে বলে প্রায় ১০-১২ জন বন্ধু মিলে তাকে ফোন করে কোতবাজার এলাকায় ডাকে। ওই ছেলেটি সেখানে গেলে বন্ধুরা সবাই মিলে তাকে কার্যত ‘চমকে’ দেয়। প্রথমে জোর করে তার জামা খোলা হয়। তারপর হাতদুটো পিছনে বাঁধা হয়। হাতদুটি পিছমোরা অবস্থায় কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত সেলোটেপ জড়ানো হয়। তারপর বন্ধুরা সবাই মিলে ওই ছাত্রটির মাথায় ডিম ফাটিয়ে ও মুখে কালি মাখিয়ে তাকে রাস্তায় বের করে। ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে ঘোরানো হয় গোটা কোতবাজার এলাকা। বন্ধুদের জন্মদিন পালনের নমুনা দেখে কার্যত ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা ছাত্রটির। কাঁদোকাঁদো গলায় সে জানায়, এটা জন্মদিন নয়, আমার মৃত্যুদিন পালন করা হচ্ছে। তবে এভাবে কেন জন্মদিন পালন? বন্ধুদের দাবি, এটাই এখন ট্রেন্ড, সর্বত্র এটাই চলছে। তবে তারা কোথা থেকে শিখল এই ট্রেন্ড? তাদের উত্তর,কলেজ মাঠে সিনিয়ররা এভাবেই নিজেদের বন্ধুদের জন্মদিন পালন করে। তাছাড়া ফেসবুক তো আছেই। বন্ধুদের দু’একজন আবার ভিডিয়ো করে গোটা ঘটনাটির। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়াই নাকি তাদের মূল উদ্দেশ্য! বন্ধুদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। অধিকাংশই মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ ও কলিজিয়েট স্কুলের পড়ুয়া।
এভাবে জন্মদিন পালন ঘিরে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মনরোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ভিডিও ভাইরাল করে দিয়ে প্রচারের আলোয় আসার নেশা চেপে বসেছে এইসব অল্পবয়সীদের মধ্যে। তাই ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যে জন্মদিন পালনেও অভিনবত্ব নিয়ে আসছে তারা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম ওই ছেলেটিকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখলাম জন্মদিন পালন হচ্ছে। এইভাবে জন্মদিন পালন জীবনে প্রথম দেখলাম। নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই।” তবে বিষয়টিকে আবার গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না অনেকেই। তাঁদের দাবি, ওরা নিজেদের মধ্যে মজা করে জন্মদিন পালন করছে, করতেই পারে। এবিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবজিত মিশ্র বলেন, “বন্ধুরা মজা করতে করতে সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মজা যে কখন সাজা হয়ে গিয়েছে, তা বন্ধুরা বুঝতে পারেনি। তবে ছেলেটি যদি বিষয়টিকে মজা হিসাবে নিতে পারে, তাহলে ঠিক আছে। যদি সে এই ঘটনায় ভেঙে পড়ে, তাহলে সে মানসিক অসুস্থতার দিকে চলে যেতে পারে।” একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ছেলেমেয়েরা কাদের সঙ্গে মিশছে, সেব্যাপারেও অভিভাবকদের নজর দেওয়া উচিত। বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অরূপ ভুঁইয়া বলেন, “যদি বিষয়টি ঘটে থাকে তাহলে নিন্দনীয়। আমি বিষয়টা সম্মন্ধে খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।”