সঞ্জয় কাপড়ী, পূর্ব মেদিনীপুরঃ
জীব প্রেমেই ঈশ্বর সেবা। ভিন্নভাবে সেই ঈশ্বর সেবার ব্রত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছে কোলাঘাটের প্রলয়।সাড়ে পাঁচ ফুটের কালো খরিষ, ছোট বাচ্চা থেকে ইয়া বড়সড় মোটাসোটা চন্দ্রবোড়া, কখনও আবার বিষাক্ত মা-গোখরা সপের সাথে তার একাধিক বাচ্চা সাপ। পেশায় জনমজুর বছর আঠাশের প্রলয় ঘোষ তাদের উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচাচ্ছে। আশেপাশের গ্রাম থেকে যখনই খবর পেয়েছে সব কাজ ফেলে খাঁচা ডিব্বা লাঠি নিয়ে হাজির প্রলয়। এরপর তাঁর সাধ্যমত সাপের সেবাশুশ্রূষা ও সংরক্ষণ করে পাঁশকুড়া বনদফতরে নিজেই খবর দেন। বনদফতরের কর্মীরা যখন সময় হয় চার চাকার গাড়ি, গ্লাভস, কাঠের পেটি, স্নেক স্টিক ইত্যাদি নিয়ে তিন/চারজন হাজির হন।
ঢাল তলোয়ারহীন সর্প প্রেমিক প্রলয় তার উদ্ধার করা ভয়ংকর বিষাক্ত সাপগুলো তখন তুলে দেন বন কর্মীদের হাতে। এক দু’বার নয় ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েক বছরের এই দৃশ্য কোলাঘাটের আঁড়র, আশুরালী, ছাতিন্দা বোরডাঙ্গির স্থানীয় মানুষ দেখে আসছে।
ঘরে বা ঝোপ ঝাড়ে বিষাক্ত সাপ দেখা দিলে খবর যায় প্রলয়ের কাছে। চলতি বছরেই লুপ্তপ্রায় প্রায় আটটি সাপ বন দফতরে হাতে তুলে দিয়েছেন বলে প্রলয়ের দাবি।
প্রলয়ের বাড়ি কোলাঘাট থানার আঁড়র গ্রামে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার একার সংসার। আয় বলতে এক বেসরকারি ইমারতি সামগ্রী সরবরাহের শ্রমিক। সাপ ধরার মত এমন বিপজ্জনক কাজে তার কেন এত আগ্রহ জানতে চাইলে, তিনি জানান, ” এই মহাবিশ্বে অন্যসব গ্রহের থেকে পৃথিবী এইজন্যই আলাদা যে এখানে সবুজ ও প্রানের অস্তিত্ব আছে। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সব প্রানীর অস্তিত্ব থাকলে তবেই আমরা সবাই বাঁচব। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে সাপ ধরা পড়লে বেশির ভাগক্ষেত্রেই পিটিয়ে মেরে দেওয়া হয়। এতে কেন জানিনা আমার খুব কষ্ট হয়। তাই আমার জন্মগত বা নিজস্ব পারদর্শিতা দিয়ে সাপগুলো ধরি এবং বনদফতরে হাতে তুলে দিয়ে নিজে খুব স্বস্তি ও আনন্দ পাই।”
বনদপ্তর তোমাকে যদি সাপ ধরার প্রশিক্ষণ দেয় তুমি কি তা নেবে? এই প্রশ্ন করলে প্রলয় আক্ষেপ করে বলেন,
“আমার এই ঘটনা স্থানীয় পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির বনজসম্পদ, ব্লক উন্নয়ন অফিস, জেলার বন দফতর সবাই কমবেশী জানেন। কতবার অনুরোধ করেছি, আমাকে সাপধরার বিশেষ স্টিক, গ্লাভস, সাপ ধরে রাখার দু-একটা পেটি দিন না। সবাই বলেন দেখছি, এভাবেই তো কেটে গেল কয়েক বছর। আমি মজুর খেটে যা পাই তাতে সংসারই চলেনা। তবে আমি যত দিন পারব আমার সীমিত সামর্থ্য দিয়েই এইসব প্রানীদের সাধ্যমত বাঁচিয়ে বনদফতরে হাতে তুলে দেব। ওনাদের তো আবার ডাকলেই সাথে সাথে পাওয়া যায়না, তখন বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়।
প্রলয়ের একবিন্দু আশার আলো, কোলাঘাট নতুন বাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবীপ্রতিষ্ঠান কথা দিয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাপধরার কিছু সামগ্রী কিনে ওর হাতে তুলে দেবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন প্রলয়ের পাশে থাকলে হয়ত আরও ভালো হত বলে অভিমত ওই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্নধার অসীম দাসের। তবে প্রলয়ের এই চেষ্টায় গর্বিত স্থানীয় পশু প্রেমী থেকে সমাজকর্মী-সহ আমজনতা।