এনএফবি, কোচবিহারঃ
রাজবংশী যুবক প্রেম কুমার বর্মনকে নৃশংস হত্যা করেছে বিএসএফ। সেই ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ির সামনে ভেটাগুড়িতে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন ওই অবস্থান বিক্ষোভ উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ, সিতাই এর তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, মেখলি গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক পরেশ চন্দ্র অধিকারী, প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, প্রাক্তন সাংসদ পার্থ প্রতিম রায়, আব্দুল জলিল আহমেদ, নুর আলম হোসেন সহ আরও অনেকে। এদিন ওই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল প্রেম কুমার বর্মনের বাবা ও দাদাকে। এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চান।
এদিন সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, প্রেম কুমার বর্মন কিভাবে মারা হয়েছে তার ছবি দেখেছেন। একটা ছেলেকে মাটিতে চেপে ধরে তার দুই পায়ে রাইফেল দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে। এমন ভাবে গুলি চালানো হয়েছে পোস্টমর্টেমের সময় তার শরীরে এক বিন্দু রক্ত ছিল না। এরা মানুষ না জানোয়ার। আর একে যারা সমর্থন করে তারা জানোয়ারের অধম। তাই তার মাধ্যমে কেন্দ্রের সরকারের কাছে বলতে চাই। এই ধরনের বিএসএফের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। না হলে দেখবেন আপনি চিরকাল প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আপনি চিরকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবেন না। এমন একটা দিন আসবে হয়তো এই বিএসএফের নল আপনাদের কর্মীদের দিকে তাক করে তারা ছুড়বে। তাই সাধু সাবধান। সকালবেলা বলেছিলাম আমাদের সৌভাগ্য। একটা মৃত্যু তো সৌভাগ্য হতে। দুর্ভাগ্য ওই জায়গাতেই, যদি প্রেম কুমার হিন্দু না হে মুসলমান হতো তাহলে বলা হতো অনুপ্রবেশকারী। তাই বিএসএফগুলি চালিয়েছে। যেহেতু প্রেম কুমার মুসলমান। যেহেতু প্রেম কুমার রাজবংশী তাই বলা হচ্ছে গরু পাচার করছিল। তাই গুলি করেছি। আচ্ছা প্রেম কুমার কে গুলি করে মেরে দিলেন। গরুটা কোথায় গেল। যে গরুটা প্রেম কুমার পাচার করছিল সেই গরুটা কি প্রেম কুমার এর কোন বন্ধু পকেটে করে নিয়ে চলে গেল। বিএসএফ মূর্খ, তাদের মন্ত্রীরা আরও বড় মূর্খ। একবার জানার চেষ্টাও করে না। যে গরুটা কোথায় গেল। এরা নাকি রাজবংশীদের ভালো করবে। এরা নাকি রাজবংশীদের পাশে দাঁড়াবে। কেমন রাজবংশী? নিশিত আদৌ রাজবংশী কিনা এটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চিলা রায়ের জন্ম দিন। সেই জন্ম দিনে গিয়ে তিনি চিলা রায় কে মঞ্চে উঠে শীলা রায় বলেন। হয় ওটা মূর্খ, চিলা রায় কে শীলা রায় বলে, নাহলে দিল্লি গিয়ে শিলাকি জোয়ানি দেখে, চিলাকে শীলা বলতে শুরু করেছে। ওর তো নানা দোষ,শিলাকি জোয়ানি দেখতেই পারব। কিন্তু এদের উপর দায়িত্ব আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী,পুলিশের দায়িত্ব, চোর, ডাকাত এবং ইডি, সিবিআই নানা রকম তদন্ত করছে। ইডি সিবিআইকে বলি হিম্মত থাকলে এই বাড়িতে এসে তদন্ত করুন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি কোচবিহার জেলায় যেসব মানুষ লোককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে এই লোকটা। ইডি সিবিআইয়ের হিম্মত থাকলে এই বাড়িতে তদন্ত করুন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর বদলা নিতে হবে।বিএসএফের নারকীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই খুনের সাজা দিতে হবে। গোড়া ধরে টানতে হবে। বিজেপিকে উৎখাত করতে হবে। সিপিএম বিজেপির আঘাতকে ধ্বংস করতে হবে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে যেখানে অন্যায় সেখানে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সম্প্রতি, কোচবিহারের মাথাভাঙায় কলেজ ময়দানে গিয়ে বিএসএফ-র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেন, বিএসএফ-র গুলিতে মৃত্যু হয়েছে দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গিতলদহ এলাকার ভাড়বাধা গ্রামের তরুণ যুবক প্রেম কুমার বর্মণের। শুধু তাই নয়, অভিষেক জানান, ওই রাজবংশী যুবকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নাকি বলছে, বিএসএফ-র ১৮০টি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল প্রেম কুমারের শরীর। ওইদিন, মৃত যুবকের মা-কেও সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় অভিষেককে।
সেই সময়েই রাজবংশী ইস্যুতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দেন তিনি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জবাবদিহির দাবিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি ঘেরাও করার ডাক দিয়ে তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “অমিত শাহর ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিক কোচবিহারের সাংসদ তাঁর নাকের ডগায় বিএসএফ গিয়ে রাজবংশীদের হত্যা করছে। ক্ষমতা থাকলে অবস্থান স্পষ্ট করুন। এর বিরুদ্ধে অবস্থান করব আমরা। সেই মতো রবিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে ওই কর্মসূচি শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ টায়। তৃণমূলের এই কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে ভেটাগুড়িতে। নিশীথের বাড়ির রাস্তা আটকানো হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড করে। সেই গলিতে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। ভেটাগুড়ির বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোতায়েন পুলিশ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমারসানি রাজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ির গলি এবং আশপাশে কয়েকটি রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় ড্রোনে নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রায় পাঁচশো পুলিশ মোতায়েন। মোতায়েন র্যাফও। ’’