অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
এটিকে মোহনবাগানের কোচ ফেরান্দো। আর দু’টি ম্যাচ জিতলে সেরা চারে থাকা কার্যত পাকা হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে লিগ টেবলের একেবারে শেষে থাকা দল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মুখোমুখি তারা। কিন্তু অনায়াসে তিন পয়েন্ট আসবে এই ম্যাচ থেকে, এমনটা মনে করেন না এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তার অন্যতম দু’টি কারণ, প্রস্তুতির সময়ের অভাব এবং দলের চোট-আঘাত। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যা বললেন ফেরান্দো, তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল।
আপনাদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ নর্থইস্ট ইউনাইটেড তেমন ভাল ফর্মে নেই। এতে কি এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেতে আপনাদের বাড়তি সুবিধা হবে?
উত্তরঃ না একেবারেই না। শেষ সাতটা ম্যাচে কোনও বাড়তি সুবিধা পাব না আমরা। সবাই তিন পয়েন্টের জন্যই খেলবে। আপাতত মূলত ছ’টা দল শেষ চারে থাকার দৌড়ে আছে। কয়েকটা দলের হাফ চান্স রয়েছে। শেষের দিকে ফুটবলাররাও তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ, এই সময়ে তাদের চুক্তিবৃদ্ধির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে ক্লাবগুলো। নতুন অফার পাওয়ারও ব্যাপার থাকে এই সময়ের পরেই। মানে সবারই ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকে। তাই কেউই খারাপ খেলতে চায় না।
একেবারে নীচে থাকা দলের বিরুদ্ধে কোনও বিশেষ পরিকল্পনা আছে আপনাদের?
উত্তরঃ প্রত্যেকটা ম্যাচেই বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা থাকে। এক ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার পক্ষপাতি নই আমি। খেলার ধরনটা একই থাকবে। পায়ে বল রাখা, জায়গা নিয়ন্ত্রণ করা, জায়গা পেলে আক্রমণে ওঠো, পজিশনাল অ্যাটাক, বিপক্ষকে চাপে রাখা। এটা আমাদের খেলার স্টাইল। কিন্তু পরিকল্পনায়, মানে ছোট খাটো ব্যাপারে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। উইঙ্গার, সেন্টার ব্যাকদের অবস্থান—এইসব ব্যাপারগুলোতে একটু অদলবদল করতেই হবে।
প্রতিপক্ষের যেহেতু কিছু হারানোর নেই, আপনার কি মনে হয়, ওরা অল আউট যাবে এবং আক্রমণে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ওরা সেটা করতেই পারে। তবে আমাদের চোট-আঘাত সমস্যা রয়েছে। রয়, উইলিয়ামস, কার্ল, হুগো, সুসাই, অমরিন্দর, টাঙরির কুঁচকিতে সমস্যা, কিয়ান—এদের সবার চোট। কয়েকজনের কোয়ারেন্টাইন থেকে বেরিয়ে অনুশীলনের তীব্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অল্প সময়ে রিকভারিটাও ঠিক মতো হয় না। অনুশীলনে ছোটখাটো চোট তো হয়েই থাকে। তবে আমাদের মেডিক্যাল স্টাফ ভাল কাজ করছে। খেলোয়াড়দের ঠিকমতো রিকভার করতে ভাল সাহায্য করছে। সে জন্য আমি খুশি। বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ফিট আছে। দেখা যাক ম্যাচের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ওরা আরও কতটা ফিট হয়ে ওঠে।
নর্থইস্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা দেশর্ন ব্রাউন আপনাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে?
উত্তরঃ আমরা যখন হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম, তখন ওগবেচে, মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে ইগর অ্যঙ্গুলোকে নিয়েও একই প্রশ্ন উঠেছিল। এরা প্রত্যেকেই ভাল খেলোয়াড়। লিগের এই শেষ পর্বটা খেলোয়াড়দের পক্ষে খুবই কঠিন। এই সময়ে ফোকাস নড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তবে ব্রাউনদের মতো খেলোয়াড়রা সবসময় আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকে। ওদের জায়গা ছাড়লেই ওরা তা কাজে লাগিয়ে গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আমাদের ৯০ মিনিট ধরে নিজেদের স্টাইল বজায় রেখে খেলতে হবে। ছোটখাটো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।
এখন পর্যন্ত সন্দেশ ঝিঙ্গনকে মাঠে নামাননি। নিয়মিত ডিফেন্ডারদের বিশ্রাম দিতে কি এই ম্যাচে সন্দেশকে নামাতে পারেন?
উত্তরঃ সন্দেশকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছি। ও জানুয়ারির মাঝামাঝি আমাদের শিবিরে যোগ দেয়। কোভিড পজিটিভও ছিল। সে সময় ১০-১২ দিন ঘরবন্দী ছিল। তারপরে আবার কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়। তারপরে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুশীলন শুরু করে। ওর এখন প্রাক-মরশুমের মতো অবস্থা। প্রাক মরশুমে সাধারণত ক্রমশ ৩০, ৪৫, ৬০ তার পরে ৯০ মিনিট ম্যাচ টাইম দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের। ওকে এখন যদি ৫০ মিনিট ম্যাচের তীব্রতার মধ্যে খেলতে নামাই, সেটা ওর পক্ষে মোটেই ভাল হবে না। তবে ও ইদানিং অনুশীলনে পরিশ্রম করছে। তবে ওকে একটা সুযোগ দেওয়ার কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, ও আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। দলকে ও সাহায্য করতেও মরিয়া।
প্রবীর দাসের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কী মত?
উত্তরঃ দলের ছেলেদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুশি। কারণ, এই কঠিন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাল খেলা বেশ কঠিন। এমনিতেই এই স্টাইলে খেলা মোটেই সোজা নয়। তবু ওরা কিন্তু ভাল খেলছে, জিতছেও। তাই এই পরিস্থিতিতে ওরা আমার কাছে একেকজন নায়ক।
গত ম্যাচে কিয়ান নাসিরি অনেকটা সময় মাঠে ছিলেন। ওর সম্পর্কে আপনার বিশ্লেযণ কী? কাল রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা যদি না খেলতে পারেন, তা হলে কি কিয়ানকে প্রথম থেকে দেখা যেতে পারে?
উত্তরঃ আমি খুশি যে, ও ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। গত ম্যাচে কার্লের পরিবর্তে ওকে নামিয়ে আমরা ৪-৪-২-এ চলে যায়। কিয়ানকে আমি বোঝাই, এই সিস্টেমে তোমার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওদের সেন্টার ব্যাকের পিছনে থাকার চেষ্টা কোরো। জায়গা নিয়ন্ত্রণ করাটাও খুবই জরুরি। ও কিন্তু দারুণ কাজ করেছে। লিস্টন ও মনবীরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য ওর যে ভাবে মুভ করা দরকার ছিল, সেগুলো নিখুঁত ভাবে করেছে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তিন গোল করার জন্য সমর্থকেরা যে ওকে নিয়ে খুব খুশি, তা আমি জানি। হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সেরা তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে ওকে রাখতে পেরে আমিও খুব খুশি। বিপক্ষকে চাপে রাখা ও নিজের অবস্থানের ক্ষেত্রে ওকে আরও উন্নতি করতে হবে। অনুশীলনে ওকে বোঝালে ও খুব ভাল বুঝতে পারে। ছোটখাটো ব্যাপারগুলো খুব ভাল বুঝে নেয় ও। এটা ওর এবং দলের পক্ষে খুব ভাল। দলে ১৫-১৬ জন ভাল খেলোয়াড় থাকলে, একজন কোচের পক্ষে সেটা খুবই ভাল।
লিস্টন আপনার দলের সর্বোচ্চ স্কোরার হলেও গত ম্যাচে একাধিক সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। এই ব্যাপারে কি ওঁর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?
উত্তরঃ ও একজন ভাল ফিনিশার। গতকালই আমরা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনালে লুকাকুকে দেখেছি কী ভাবে পরপর দুটো সহজ গোল হাতছাড়া করার পর সবচেয়ে কঠিন সুযোগটা থেকে গোল করে। লিস্টনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সে রকমই হয়েছে। তবে আমার কাছে সুযোগ তৈরি করতে পারাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ও সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। কারণ, হয়তো আসল সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারছে না। ওকে এই বিষয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। অনুশীলনে ওকে এই ব্যাপারটা শোধরাতে হবে।
এখন পরপর ম্যাচ খেলতে হবে আপনাদের। এই ম্যাচগুলো নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তরঃ এটা পুরো নির্ভর করছে আমাদের মেডিক্যাল স্টাফের ওপর। এখন খেলো, রিকভার করো আবার খেলো—এ ভাবেই এগোতে হবে আমাদের। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর রবিবার রিকভারি। সোমবার অনুশীলন। মঙ্গলবার আবার ম্যাচ। অনুশীলনে দলকে তৈরি করা এখন খুবই কঠিন। কারণ, খেলোয়াড়রা সবাই খুব ক্লান্ত। মেডিক্যাল স্টাফের কাছে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। গোয়ার পরে আমাদের ম্যাচ পড়বে কেরালার বিরুদ্ধে। আমার কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, ছোটখাটো কিছু বিষয় ঠিক রাখার জন্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। সব কিছু নিয়ে এখন কাজ করার সময় নেই।
সেরা চারের মধ্যে শেষ করতে গেলে এখন আপনাদের অন্তত কত পয়েন্ট পেতে হবে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তরঃ আমার মনে হয় ৩০-৩৫ পয়েন্ট পেলে সেরা চারে থাকা নিশ্চিত করা যাবে। তবে আমরা লিগ টেবলের শীর্ষে থেকেই শেষ করতে চাই। সে জন্য ৩৮ পয়েন্ট পেতেই হবে আমাদের। তবে গতকাল আপনারা দেখেছেন জামশেদপুর গতকাল কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে যে ভাবে ৩-০ গোলে জিতল, তাতে গোলপার্থক্যের ওপরে প্রভাব পড়বে।