প্রেরণার উৎস

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবন্ধকতা জয় রিন্টুর

এনএফবি, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

কথায় বলে মনের ইচ্ছা থাকলে কোন প্রতিবন্ধকতাই স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারে না। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরের রিন্টু মালি যেন তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জীবন সংগ্রামের যাত্রাটা শুরু হয়েছে জাতীয় সড়কের পাশে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান থেকেই। যেখানে কোনো রকমে দুই বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যাওয়ার অবস্থা পরিবারের। সেই পরিস্থিতিতে ও স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি রিন্টু মালির। ছেলেটা স্বপ্ন দেখতো একদিন বড় হয়ে বাবা-মার দুঃখ কষ্ট দূর করবে। চরম প্রতিকূলতার মাঝেও অধ্যবসায় এবং মনের জেদ নিয়ে এগিয়ে চলা ছেলেটি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে নিট পরীক্ষায় বসে। এরপরই নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ছেলেটি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ আসে। এযেন চরম দরিদ্রতার মাঝেও স্বপ্ন পূরণের এক গল্প।

ছেলের সাফল্যে আপ্লুত রিন্টু মন্ডলের মা মীরা মন্ডল মালি জানান “ছোটো থেকেই আমারও ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করব, যদিও অভাবের সংসারে করে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই ছেলেকে ছোট থেকেই শেখাতাম জীবনে এমন কিছু কর, যেখান থেকে মানুষের সেবা করতে পারবি। আজ ও মেডিক্যালে সুযোগ পেয়েছে আমি অত্যন্ত খুশি।”

জানা গেছে শহরে জাতীয় সড়কের পাশেই সরকারি জায়গায় বহু বছর ধরে বাসবাস করত রিন্টু ও তার পরিবার। ২০২০ সালে রাজনৈতিক সভার কারণে তড়িঘড়ি পুরসভার পক্ষ থেকে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মেধাবী ছাত্রটির পরীক্ষার আগে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মাথার উপরে ছাদ না থাকলেও জীবনের লড়াইটা থেমে থাকেনি রিন্টুর ৷ বুনিয়াদপুর হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা কেয়া সরকার বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তার পাশে দাঁড়ান সেই সময়। এছাড়াও শহরে গৌরাঙ্গ বাবু, পার্থ বাবুর মত সহৃদয় মানুষজনদের সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকে রিন্টু।

বর্তমানে রেল লাইনের ধারে খুব কষ্টে এক চিলতে টিনের ঘর তাদের। জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছে রিন্টু স্বচক্ষে। কিন্তু হার মানেনি ছেলেটি। জীবনে পড়াশোনা করতে চাইলে দারিদ্রতা কখনোই বাধা হতে পারে না এমনটাই মনে করে ছেলেটি। কঠিন এই জীবন সংগ্রামের মাঝেই কেয়া ম্যাডাম সুজিত স্যারের মত শিক্ষকেরা বিনামূল্যে শিক্ষাদান করে গিয়েছে তাকে।
এই প্রসঙ্গে মেডিক্যালে সুযোগ পাওয়া রিন্টু মন্ডল বলে “মনের ইচ্ছা এবং বিশ্বাস থাকলে দরিদ্র ঘর থেকেও জীবনে বড় কিছু করা যায়।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের রিন্টু মালি এখন জেলার হাজার হাজার ছাত্রদের কাছে জীবনে বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা।

আরও পড়ুনঃ পুরভোট নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া তৃণমূল, লড়াইয়ে বিরোধীরাও