বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে আইআইটিতে র‍্যাঙ্ক বালুরঘাটের সীতানাথের

এনএফবি, বালুরঘাটঃ

প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যেও জেদ ও মনের জোরে এবার সর্বভারতীয় স্তরে ভারতীয় প্রযুক্তি বিদ্যার প্রতিষ্ঠান আইআইটি-র এমএসসি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ২৫১ র‍্যাকিং করে সকলকে চমকে দিয়েছে বালুরঘাট শহরের খাদিমপুর পাড়ার কলেজে পড়া ছাত্র সীতানাথ মজুমদার। কিন্তু সবাইকে চমকে দিলেও কিভাবে তার এই সাফল্যকে ধরে রেখে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে তা নিয়ে নিজে ও তার পরিবার ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বাধ্য হয়ে সরকারি সাহায্যের আশার দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছে সীতানাথ ও তার পরিবার।

সীতানাথের বাবা সৌরেন্দ্রনাথ মজুমদার পৌরহিত্য করে যা রোজগার করেন, তাতে তার মাকেই অল্প রোজগারের টাকায় সংসার চালানোর হাল ধরতে হয়েছে। আর্থিক অসঙ্গতিকে সঙ্গে নিয়েই সীতানাথের ছিল শুধু বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা। সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে শখ আহ্লাদ ছেড়ে দিয়ে জীবন সংগ্রামের দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে সফল হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরের এই পরীক্ষায়, যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

বালুরঘাট শহরের খাদিমপুর হাইস্কুল পাড়ায় সীতানাথদের বাড়ি। সেখানে ইটের গাথনির দেওয়াল আর টিনের ছাউনির জরাজীর্ণ দুই কক্ষের ঘর। বৃষ্টি হলে টিনের ফুটো বেয়ে পড়ে জল। বাড়িতে পাওয়া গেল না তার বাবাকে, কেননা বাবাকে নিত্যদিনের মত পৌরহিত্য করতে বের হতে হয়েছে। মা রয়েছেন বাড়িতে। সীতানাথ তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।তাই ছেলের এই অভাবনীয় সাফল্যের পরেও তার ভবিষ্যৎ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সীতানাথের বাবা – মা।

সীতানাথের মা সুমিতা মজুমদার বলেন , ‘ভালো ফল করে ছেলের খুব খুশি হওয়ার কথা। অথচ সে মন খারাপ করে বসে আছে।আর্থিক দুরবস্থার জন্য ওখানে ভর্তি হতে পারবে কি না, সেটা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি । ভর্তি হওয়া ও থাকা-খাওয়ার জন্য অনেক টাকা লাগবে। আমার তো দুবেলা ঠিকমতো খাবারই জোটে না। ছেলের পড়ালেখার খরচ পাব কোথায়? তাই বাধ্য হয়ে সরকারি কোন সাহায্য ও কোন সহৃদয় ব্যক্তি সহয়তা করলে সীতানাথের এই পড়াশোনা চালিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। নইলে কি করব তা ভেবে পাচ্ছিনা।’

সুমিতা মজুমদার ৷ নিজস্ব চিত্র

অপরদিকে সীতানাথ জানিয়েছে সে খাদিমপু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সায়েন্স নিয়ে পাশ করে বর্তমানে বালুরঘাট কলেজে সিক্সথ সেমিস্টারে পড়ছে। তার পড়াশোনা চালিয়ে আসার পেছনে যেমন স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছে সে, তেমনি কলেজের অধ্যাপকদের কাছ থেকেও নানা ভাবে সাহায্য পেয়েছে সে। বর্তমানে আইআইটি তে পড়াশোনা করতে যাওয়ার জন্য সে সরকারি আর্থিক সহয়তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।পেলে পারবে তার এতদিনের স্বপ্ন সফল করে বাবা মার মুখে হাসি ফোটাতে। না হলে কি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না সে।

যদিও সীতানাথ যে বালুরঘাট পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপান্বিতা সিংহ রায় জানিয়েছেন তিনি বিষয়টি জানেন, তিনি ওর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য সব রকম সাহায্য করবেন, বলে তিনি জানান।

দীপান্বিতা সিংহ রায় , স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৷ নিজস্ব চিত্র

এখন দেখার চরম দারিদ্রতার সাথে লড়াই চালিয়েও সীতানাথ সরকারি বা কোন সহৃদয় ব্যক্তির সহয়তায় নিজের স্বপ্ন সফল করে উঠতে পারে কিনা।