মৃতপ্রায় খেজুর গুড়ের ব্যবসা ধরে রাখাটাই এখন চ্যালেঞ্জ শিউলিদের

মনোদীপ ব্যানার্জী, মুর্শিদাবাদঃ

বাংলার ১২ মাসের ৯ মাস রাজমিস্ত্রির কাজ আর বাকি ৩ মাস খেজুর গুড়ের ব্যবসা, এই করেই নিজের সংসার চালাচ্ছেন প্রায় বছর পঞ্চাশের প্রবীর সরকার। বাড়ির রোজগেরে মানুষ বলতে তিনি একা, সবে কলেজ পাশ করা ছেলে মৃন্ময় সাহায্য করছে বাবাকে।

অগ্রহায়ণ মাসে হালকা শীতেও বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ঘাম ঝরাচ্ছে কাশিমবাজারের একাধিক শিউলি। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু হয় খেজুরের গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামানো। সারা দুপুর রস জ্বাল দিয়ে চলে গুড় তৈরির কাজ। জ্বাল দিয়ে খেজুরের তরল রস কে শক্ত করতে পারলে তবেই মিলবে পাটালি গুড়। তবে ভালো গুড় তৈরি করলেও মিলছে না দাম, জানালেন সুকুমার সরকার, স্বপন সরকাররেরা।

“বাবা ৬০ বছর বয়স ধরে নিজে এই পেশায় রয়েছে। ঠাকুরদাও ছিল এই পেশার লোক,তাই আমরাও বংশ পরম্পরায় এই পেশায় আছি।”এই বলে কিছুটা থিতু হলেন মাঝ বয়সী সুকুমার সরকার। বাড়ছে জ্বালানির দাম। বর্তমানে রস লাগানোর প্রতি ঠিলির দাম ৬০ টাকা,ব্যাপক হারে বেড়েছে জ্বালানি হিসেবে প্যাকাটির দামও। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে গুড়ের। “মানুষ তো তাই খেজুর গুড় খাচ্ছে কম, গুড়ের রসগোল্লা খাচ্ছে বেশি।” – এই কথা বলে ফোকলা দাঁতের পাশ দিয়ে ফুটে উঠল এক শিউলির বেদনার হাসি।

নেই কোনো সরকারি সাহায্য। বহু পরিশ্রমেও দুবেলা ঠিক মতো জোটেনা ভাত। নতুন প্রজন্ম মুখ ফেরাচ্ছে এই পেশা থেকে। নবাব তালুকের সদর শহর বহরমপুর থেকে শুরু করে জেলার বাইরেও যে খেজুর গুড় প্রতি বাঙালির ঘরে ঘরে আগে পৌঁছে যেত, তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও মৃতপ্রায় এই বাংলার স্বাদকে আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন তার কোনো উত্তর নেই স্বপন, সুকুমার, প্রবীরদের কাছে।

পাটালি গুড়