এনএফবি, ঝাড়গ্রামঃ
বুধবার মেদিনীপুরের জনসভা শেষ করে হেলিকপ্টারে ঝাড়গ্রামে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়্গ্রাম রাজ কলেজ হেলিপ্যাড ময়দানে হেলিকপ্টার থেকে নেমে সড়ক পথে তিনি ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যান ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ডাক্তার মানস ভুঁইয়া, অরূপ বিশ্বাস, সন্ধ্যা রানী টুডু ,ইন্দ্রনীল সেন , বুলুচিক বরাইক, বিরবাহা হাঁসদা, শ্রীকান্ত মাহাতো, ঝাড়গ্রাম জেলার জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত ও পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা সহ বিভিন্ন দপ্তরের সচিব ও আধিকারিকরা। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়িটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ঐ প্রকল্প গুলি রূপায়ণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা। সেইসঙ্গে ১৩ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন । ওই প্রকল্প গুলি রূপায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিও, আইসি, ওসি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ বিভিন্ন আধিকারিকের কাছ থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নেন। কোথাও কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা তাদের কাছে তিনি জানতে চান। সেই সঙ্গে উন্নয়নের কাজ কতটা এগিয়েছে এবং আর কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তাও তিনি বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করেন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ঝাড়গ্রামের কয়েকটি এলাকায় পানীয় জলের ও চাষের জলের সমস্যা রয়েছে । সেই সমস্যার দ্রুত রূপায়ণ করতে হবে। যাতে মানুষ পানীয় জল ও চাষের জল থেকে বঞ্চিত না হয় ।পুকুর খননের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাটির সৃষ্টি প্রকল্প এর মাধ্যমে আরও বেশি করে কাজ করার তিনি নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত কে নির্দেশ দেন ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজের বাকি টাকা আগে শোধ করতে।
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দু পাতার দাম শ’গুণ বাড়িয়ে দিলেন। যেখানে আড়াই কেজি কেন্দু পাতা দিয়ে মানুষ ৭৫ টাকা পেতেন। এখন সেখানে ১৭০ টাকা করে পাবে ।এর ফলে ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গল ঘেরা গ্রাম গুলির দরিদ্র মানুষেরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোথাও অবৈধভাবে বালি খাদান চলছে কিনা তাও জানতে চান জেলা শাসকের কাছে এবং নয়াগ্রামে জঙ্গলকন্যা সেতুর নিচ থেকে বালি তোলা হচ্ছে কিনা তাও জানতে চান। অবৈধভাবে কোন কাজকে বরদাশ্ত করা হবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন।
আদিবাসী ছেলেমেয়েরা শিক্ষায় এগোচ্ছে না পিছোচ্ছে তা নিয়ে তিনি সমীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেন। আদিবাসীদের উন্নয়নে কি কি কাজ করেছেন তা তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন । মাওবাদীদের নামে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে বলেও তিনি তার বক্তব্যর মাধ্যমে তুলে ধরেন। বিভিন্ন এলাকায় নাকা চেকিং পয়েন্ট বসানোর জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন । যাতে ঝাড়গ্রাম জেলায় নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলির আরও উন্নয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আগে মানুষ স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য ঝাড়গ্রাম আসতেন। এখন বহু মানুষ ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসেন। তাই পর্যটকদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকেও নজর রাখার নির্দেশ দেন । সেই সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন,”দুবেলা দুটো ভাত সবজি হলেও মানুষের চলে। যদি কেউ দোষ করে তাকে অ্যারেস্ট করতে আমার সময় লাগবে না। আমি অন্যায়কে কোনদিন মেনে নেয়নি নেবোনা। মানুষের জন্য আমি কাজ করে যাব।” সেই সঙ্গে তিনি ঝাড়গ্রাম জেলার সবর পরিবারগুলির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার নির্দেশ দেন জেলাশাসককে ।সবর ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার তিনি নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ঝাড়গ্রাম এর উন্নয়ন কিভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে তিনি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।