রাজ্য

এড়ানো গেল না অশান্তি! চলল বোমাবাজি, শান্তিপূর্ণ ভোট ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

এনএফবি, নিউজ ডেস্কঃ

এড়ানো গেল না অশান্তি। বেলা বাড়তেই কলকাতা পুরভোট ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ল। চলল বোমাবাজিও। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি। এজেন্ট বসতে না দেওয়া, প্রার্থীকে বুথে ঢুকতে না দেওয়া-সহ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সরব বিরোধীরা। রাজ্যের শাসক তৃণমূল সুপ্রিমো জানালেন ভোট শান্তিপূর্ণ। যদিও এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ জানিয়েছে বোমাবাজি হয়েছে। দুপুর ২ টা ৩৫ নাগাদ কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, জৈন স্কুলের হাতাহাতির ঘটনায় ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টাকি স্কুলের বোমাবাজির ঘটনায় ধৃত ১। ভোটে অশান্তির ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশের জালে ৭২ জন।

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন বিকেল ৪ টা নাগাদ ভ্রাতৃবধু তথা ৭৩ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান,”মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোট ভালোই হচ্ছে।“ অপরদিকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ছাপ্পা ভোট রিগিংয়ের অভিযোগে সরব হয়েছে। পুননির্বাচনের দাবিও তুলেছে তারা। পুরভোটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সাংবাদিকদের জানান, “বাংলায় গণতন্ত্র নেই পুলিশতন্ত্র চলছে। পুরভোট বেআইনি।“

এমএলএ হোস্টেলের গেটে বিজেপির বিক্ষোভ।

পুরভোট নিয়ে সরব রাজ্যের অন্য বিরোধী দলগুলিও। ভোট দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে নেপাল মাহাতোর নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি দল নির্বাচন কমিশনের দফতরে দেখা করতে যাওয়ার কথা। বেলা ১২ টা নাগাদ ৪৫ নং ওয়ার্ডের শ্রী জৈন্য স্কুলে পোলিং বুথের ভিতরেই তৃণমূল-কংগ্রেস হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, ওই বুথে ভুয়ো ভোটার কার্ড নিয়ে ভোট দিতে আসা এক ব্যক্তিকে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক ধরে ফেলে। সেখান থেকেই অশান্তির সুত্রপাত।

ভোটে বেনিয়মের অভিযোগে ৭২, ৭৩, ১০০,১০১,১০২, ১১০ নং ওয়ার্ডে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে বামেরা বলে খবর। খিদিরপুর বাঘাযতীন মোড়ে বিক্ষোভও দেখায় সিপিআইএম।

নির্বাচনে বে-নিয়মের অভিযোগে বামেদের বিক্ষোভ।

বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“ নাচতে না জনালে উঠোন বাঁকা।“ মিত্র ইনস্টিটিউশানে ২ টা ১০ নাগাদ ভোট দিতে এসে সাংবাদ মাধ্যমকে অভিষেক আরও বলেন, “কোনও অশান্তিতে তৃণমূল কর্মীদের যোগ পেলে ভিডিও ফুটেজ সামনে আনুন, দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেবে দল।“ একই সঙ্গে এদিন বিকেল ৪ টে ২০ নাগাদ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে তৃণমূল জানায়, আশান্তি বাধানোর ঘটনায় কোনওভাবে তৃণমূলের কেউ জড়িয়ে থাকলে দল সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেবে।

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে, ৬৩.৩৭ শতাংশ। দিনের শেষ কলকাতা পুরভোট নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, মহানগরের মোট ১৬৫৬টি কেন্দ্রে ১৪৪ টি ওয়ার্ডের ভোট গ্রহণ হয়েছে। বুথের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯৫৯টি। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ। তবে দুটি বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে একটি খান্না স্কুলের সামনে। এই ঘটনায় কেউ আহত হননি। এব্যাপারে এন্টালি থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। দ্বিতীয়টি আমহার্স্ট স্ট্রিটে। সেখানে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৬ টা থেকে কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে। লাগাতার ২৪ ঘন্টা কাজ করেছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মোট ৪৫৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। আজকে মোট ১৯৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৫৫টি ইভিএম পরিবর্তন করা হয়েছে। বুথ দখলের কোনও অভিযোগ নেই। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও কোনও অচল সিসিটিভি ছিল না। নির্বাচনের শেষ মূহুর্তে কিছু কোভিড রোগী ভোট দিয়েছেন।

বোমাবাজির চিহ্ন