এনএফবি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ
মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রির্সাচ রির্পোট অনুযায়ী শেয়ার মার্কেটে ব্যাপক ভাবে ধ্বস দেখা দিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর। আদানি গোষ্ঠীর এই ধ্বসে শুধু ভারতবর্ষের মানুষের নয় বাংলার মানুষের কপালেও এক ভয়ংকর চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কারন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির হাতে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরীর ছাড়পত্র তুলে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালের ২ রা ডিসেম্বর নবান্নে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির সঙ্গে এই বিষয়ে একটি বৈঠক করে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বিনিয়োগে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ছাড়পত্র রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ওই বছর ১২ অক্টোবর কলকাতার ইকোপার্কে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরীর ছাড়পত্র গৌতম আদানির ছেলে করন আদানির হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পড়ুনঃ তাজপুর বন্দর নির্মানের দায়িত্বে আদানি
যেখানে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২৫ হাজার এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা।
তারপর কতদুর কাজ এগিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তাজপুরে যায় নিউজ ফ্রন্ট বাংলার(NFB) প্রতিনিধি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক জমি জরিপের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে সেখানে থাকবে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল, ৩.৯ মিটার উঁচু জোয়ারের জলে ১ লক্ষ টন পণ্য বহনকারী বড় বড় জাহাজ সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। তবে বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক ইন্সপেকশনের পর সেখানে আর কোনও রকম কাজ এগোয়নি।
তবে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে খবর পেয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই আশায় বুক বেঁধে ছিল তাজপুরের মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিস দে। বর্তমানে একজন গাড়ি চালক তার দাবি তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হলে ভালো হয়। কর্মসংস্থান সুযোগ হলে তাদের সংসার চালাতে সুবিধা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন কোন রকম কাজ চালু হয়নি, আমরা চাই এখানে দ্রুত শুরু হোক গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ।
অপর স্থানীয় বাসিন্দা সুবল চন্দ্র মাইতি। পেশায় ছোট স্টেশনারি ব্যবসা। তার আবেদন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কাতর আরজি করছি উনি যেন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং দ্রুত তাজপুরে বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তাতে এখানকার বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে, রুটি রোজগারের জায়গা হবে, মানুষ দুটো খাওয়ার জোগাড় করতে পারবে।
কৌশিক মহাতো, পেশায় রকমারি ব্যবসায়ী তিনি জানান, আদানি গোষ্ঠীর হাতে তাজপুরের সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ টেন্ডার স্বরূপ দেওয়া হয়েছিল, এটা আমরা শুনেছি তারপরেই আশা করে ছিলাম যে যেহেতু আমরা বেকার সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে জমি জরিপের কাজ তারপর আর কোন কাজ হয়নি। তবে চাই দ্রুত শুরু হোক এই বন্দর নির্মাণের কাজ।
তাজপুরের বাসিন্দা সুরঞ্জন বড়াই। পেশায় দোকানদার। তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, তাজপুরের সমুদ্র বাঁধ সেটাই ঠিকঠাক ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে না সমুদ্র বন্দর তো দূরের কথা। আর বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর যা পরিস্থিতি তাতে আমাদের কর্মসংস্থানের আশা খুবই ভয়াবহ।
বাঁকুড়ার বাসিন্দা সৌমেন মুখার্জি তিনি জানান, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার মার্কেটের ধ্বস থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা রাখছি তাজপুরে অবশ্যই সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে ধসের পর তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে এ রাজ্যে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ কী- তা নিয়ে গভীর সংশয়ে আমজনতা। এ রাজ্যে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের আশা কতটা পূরণ হবে তা সময়ের অপেক্ষা।