অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
আইএসএল (isl) যে ছন্দে শেষ করেছিল এটিকে মোহনবাগান, মঙ্গলবার এএফসি কাপের প্রাথমিক পর্বের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে সেই ছন্দই ধরে রাখল তারা। এ দিন অনায়াসে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে পড়ল সবুজ-মেরুন বাহিনী। মঙ্গলবার ঘরের মাঠে তারা ৫-০-য় হারাল শ্রীলঙ্কার এক নম্বর ফুটবল খেলিয়ে ক্লাব ব্লু স্টার এসসি-কে। প্রথমার্ধেই জনি কাউকোর জোড়া গোল ও মনবীরের গোলে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে ডেভিড উইলিয়ামস ও মনবীর তাঁর দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন।
দু’বছর পর ঘরের মাঠে প্রায় ২৫ হাজার সমর্থকদের সামনে খেলে তাদের মন ভরিয়ে দেন উইলিয়ামসরা। প্রথম একাদশে এ দিন অমরিন্দর সিং, লিস্টন কোলাসোকে বাদ দিয়েই মাঠে দল নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। অমরিন্দর এ দিন স্কোয়াডেই ছিলেন না। রয় কৃষ্ণা ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে যাওয়ায় তিনিও এ দিন দলে ছিলেন না। সন্দেশ ঝিঙ্গন চোটের জন্য খেলতে পারেননি। একাধিক তারকাকে ছাড়াই মাঠে নামলেও কোনও সমস্যা হয়নি ফেরান্দোর বাছা প্রথম এগারোর ছেলেদের।
শুরু থেকেই এ দিন বিপক্ষকে চাপে রাখে এটিকে মোহনবাগান। ঘন ঘন আক্রমণে ওঠেন কিয়ান নাসিরি, হুগো বুমৌস, ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিংরা। প্রথমার্ধে বেশির ভাগ সময় ব্লু স্টারের প্রায় গোটা দলটাই নিজেদের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত ছিল।
লিস্টন যে ভাবে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন, এ দিন সেভাবে ঘনঘন বাঁ উইং দিয়ে আক্রমণে উঠতে দেখা যায় কিয়ানকে। ডানদিক দিয়ে মনবীর। মাঝখান দিয়ে বুমৌস, ডেভিড ও কাউকো শ্রীলঙ্কান দলের রক্ষণকে সমানে সমানে ব্যস্ত রাখেন। ২৪ মিনিট ধরে তাদের আটকে রাখাটা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে।
প্রথম গোলটি আসে ২৪ মিনিটের মাথায়। মাঝ বরাবর বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন হুগো বুমৌস। তিনি পাস দেন বক্সের মধ্যে তাঁর ডান দিকে থাকা মনবীর সিংকে। মনবীর বাঁ দিকে থাকা জনি কাউকোকে ক্রস দেন এবং গোলে শট নিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার (১-০)।
এর পাঁচ মিনিট পরেই (২৯) ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। ডানদিকের উইংয়ে একটি এরিয়াল বলের দখল নেওয়ার লড়াইয়ে ব্লু স্টার মিডফিল্ডার কাজাকোপানকে হারিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মনবীর। সামনে এক ডিফেন্ডার তাঁকে বাধা দেওয়ার আগেই গোলে শট নেন (২-০)।
তৃতীয় গোলটি আসে ৩৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে। এটিকে মোহনবাগানের একটি আক্রমণের সময় বক্সের মধ্যে ব্লু স্টারের বিদেশি মিডফিল্ডার প্রিন্স বোয়াদু হ্যান্ডবল করায় পেনাল্টি পায় সবুজ-মেরুন শিবির। সেই পেনাল্টি থেকেই গোল করেন কাউকো।
প্রথম গোলের ঠিক আগেই গোলে জোড়া শট নেন কিয়ান ও ডেভিড। কিন্তু দু’বারই আটকে দেন ব্লু স্টারের গোলকিপার লাকপ্রিয়া ফের্নান্দো। শ্রীলঙ্কার দলের মধ্যে এ দিন সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় তাঁকেই।
দ্বিতীয়ার্ধেও প্রায় একই ছবি দেখা যায়। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই একাধিক সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে সবুজ-মেরুন শিবির। ডানদিক দিয়ে মনবীর সিং-এর ক্রস লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে অবধারিত গোল পেতেন ডেভিড উইলিয়ামস। এর মিনিট দুয়েক পরেই বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া হুগো বুমৌস মাইনাস করেন কিয়ানকে, যিনি দূরের পোস্টে বল পাঠালেও তা অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৫৮ মিনিটের মাথায় প্রবীর দাসের জায়গায় বিদ্যানন্দ সিং ও শুভাশিস বোসের জায়গায় সুমিত রাঠিকে নামান ফেরান্দো। প্রথমার্ধে যতটা রক্ষণাত্মক ছিল ব্লু স্টার, দ্বিতীয়ার্ধে ততটা রক্ষণাত্মক ছিল না তারা। মাঝে মাঝে আক্রমণে ওঠেন স্নেহাল সন্দেশরা। তবে সঠিক ফিনিশিংয়ে অভাবে তাঁরা বিপক্ষের এলাকায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেনি।
আক্রমণ বিভাগকে তরতাজা করে তোলার জন্য ৬৭ মিনিটের মাথায় কিয়ানের জায়গায় রবি বাহাদুর রাণা ও জনি কাউকোর জায়গায় আশুতোষ মেহতাকে নামান কোচ। তবে চার নম্বর গোলটি কোনও পরিবর্ত খেলোয়াড় নয়, আসে ডেভিড উইলিয়ামসের পা থেকে। ৭৬ মিনিটর মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা মনবীরের মাপা ক্রসে পা ছুঁইয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন অস্ট্রেলীয় তারকা (৪-০)।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে ফের গোল করেন মনবীর। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো হুগো বুমৌসের থ্রু পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে গোল করেন মনবীর (৫-০)।
এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে আগামী মঙ্গলবার এটিকে মোহনবাগান বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেডের মুখোমুখি হবে। মঙ্গলবার তারা মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ওয়াকওভার পেয়ে কলকাতায় আসছে।