এনএফবি,ঝাড়গ্রামঃ
জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রাম । ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে মকরসংক্রান্তির দিন শতাব্দী প্রাচীন বুলবুলি পাখির লড়াই বহুদিন আগে থেকেই হয়ে আসছে । প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন সকালে গোপীবল্লভপুর ঠাকুরবাড়ির উঠোনে দুটি পাড়ার মধ্যে বুলবুলি পাখির লড়াই হয় । জঙ্গলমহলে পর্যটনে বুলবুলি পাখির লড়াই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা দেখার জন্য বাইরে থেকে পর্যটকেরা আসেন । কিন্তু এই বছর মকরসংক্রান্তির দিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বুলবুলি পাখির লড়াই স্থগিত রাখা হয়েছিল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে । তারা জানিয়েছিলেন আকাশ পরিষ্কার হলেই বুলবুলি পাখির লড়াই হবে । সেইমতো শনিবার সকালে ঝলমলে রোদ উঠতে গোপীবল্লভপুর ঠাকুরবাড়ির উঠোনে আয়োজিত হল বুলবুলি পাখির লড়াই ।
এই বুলবুলি পাখির লড়াই এর বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে । মকরসংক্রান্তির প্রায় একমাস আগে থেকে সুবর্ণরেখা নদীর চর থেকে ধরে আনা হয় বুলবুলি পাখিগুলিকে । বুলবুলি পাখিগুলিকে খাঁচায় রেখে আপেল, কলা সহ বিভিন্ন প্রকার ফল খাইয়ে তাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয় । যেদিন বুলবুলি পাখির লড়াই হয় সেইদিন বুলবুলি পাখি গুলিকে সকাল থেকে উপোস রাখা হয় । তারপরে তাদের সামনে একটি পাকা কলা খাওয়ার জন্য দেওয়া হয় এবং সাথে সাথে সরিয়ে নেয়া হয় । পাকা কলা খাওয়ার জন্য দুই বুলবুলি পাখির মধ্যে লড়াই শুরু হয় । যে বুলবুলি পাখি সবচেয়ে বেশি কামড় দিতে পারবে অপর বুলবুলি পাখি কে তার পয়েন্ট হবে বেশি । এই পয়েন্টের মাধ্যমে হারজিত ঘোষণা করা হয় । আর যে বুলবুলি পাখি হেরে যায় তার ঝুটি কেটে নেওয়া হয় । আর যে জেতে তাকে পুরস্কারের পাশাপাশি তার কপালে ভালো খাওয়ার জোটে । আর যারা এই বুলবুলি পাখির লড়াই করে তাদেরকে হাওসি বলা হয় ।
জঙ্গলমহলে মকর সংক্রান্তির সময় বিভিন্ন জায়গায় মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন করা হয় । সেই মোরগ লড়াইয়ে মোরগের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যায় । কিন্তু গোপীবল্লভপুর এর ঠাকুরবাড়ির এই বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে কোন রক্তপাত হয় না । কেবলমাত্র মানুষ এই লড়াইয়ের মাধ্যমে আনন্দিত হয় । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই বুলবুলি পাখির লড়াইয়ের ঐতিহ্য ।