জুলাই 27, 2024
Latest:
ক্রীড়া

নতুন বছরেও জয় অধরা লাল হলুদের

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

বছর বদলালেও এসসি ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য পরিবর্তন হল না। সেই ড্র দিয়েই নতুন বছর শুরু করল তারা, জয়ের মুখ দেখতে পেল না। রক্ষণে ক্রমশ উন্নতি করলেও আক্রমণে যে তেমন কিছুই হয়নি, সেটাই বোঝা গেল মঙ্গলবার, বাম্বোলিমে। ২৮ মিনিটের মাথায় অসাধারণ গোলে সেম্বয় হাওকিপ দলকে এগিয়ে দিলেও ৫৬ মিনিটের মাথায় সেই গোল শোধ করেন তাঁরই এক সতীর্থ সৌরভ দাস। ফলে এ বারের হিরো আইএসএলে ন’টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও লিগ টেবলে জয়ের ঘরে এখনও একটিও সংখ্যা জমা হল না তাদের।

এ দিন প্রথম এগারোয় মাত্র দু’জন বিদেশি ফুটবলারকে রেখে দল নামিয়েছিল অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিংয়ের প্রশিক্ষণে প্রথম খেলা লাল-হলুদ বাহিনী। টমিস্লাভ মর্সেলা ও ড্যানিয়েল চিমা দলে থাকলেও দু’জনেই ছিলেন নিষ্প্রভ। যথারীতি একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করেন চিমা। তবে মর্সেলা ও তাঁর সতীর্থ ডিফেন্ডাররা এ দিন নিজেদের ঘর বাঁচানোর ভূমিকা ভাল ভাবেই পালন করেন। বিশেষ করে হীরা মন্ডল ও আদিল খান ছিলেন নিজেদের জায়গায় অটল। তাঁদের তৎপরতাতেই এদিন ব্যবধান তৈরি করতে পারেননি সুনীল ছেত্রীরা। এই ড্রয়ের ফলে লিগ টেবলে দুই দলেরই স্থান অপরিবর্তিত রইল।

২৮ মিনিটঃ ১-০। বক্সের ডান দিকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে প্রথম পোস্টের সামনে দুর্দান্ত ক্রস দেন ওয়াহেংবাম লুয়াং। উড়ে আসা এই বল সামনে ডাইভ দিয়ে কপাল দিয়ে ফ্লিক করে বল গোলে পাঠিয়ে দেন সেম্বয়।
৪১ মিনিটঃ বিপক্ষের গোলের সামনে হামতের লং বলে চিমা ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে গোল ছিল অবধারিত। কিন্তু ব্যর্থ হন চিমা।
৫৬ মিনিটঃ ১-১। বিপক্ষের ফ্রি কিক হেড করে ক্লিয়ার করতে যাওয়া সৌরভের মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় গোলে। অরিন্দম বাঁ দিকে ডাইভ দিয়েও দলকে বাঁচাতে পারেননি।
৭২ মিনিটঃ ৭২ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে একটি মাইনাসে বক্সের মধ্যে থেকে গোলে শট নেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তাঁর শট গোললাইনে দাঁড়িয়ে সেভ করেন হীরা।
অপ্রত্যাশিত ভাবে আমির দার্ভিসেভিচকে প্রথম এগারোর বাইরে রেখেই এ দিন দল নামান এসসি ইস্টবেঙ্গলের অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিং। পরিবর্ত হিসেবেও নামেননি তিনি। ৪-১-৪-১ ছকে দল সাজান তিনি। সামনে রাখেন চিমাকে ও তাঁর পিছনে হামতে, হাওকিপ, লুয়াং ও মহেশ। বেঙ্গালুরুর প্রথম এগারোয় এদিন সুনীল ছেত্রীকে দেখা যায়নি। তিনি নামেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে।

শুরুর দিকে কোনও দলই তেমন আগ্রাসী ফুটবল খেলতে পারেনি। তবে দুই দলই একাধিক হাফ চান্স তৈরি করেন। মাঝ মাঠেই মূলত লড়াই হয় দু’পক্ষের। দশ মিনিটের মাথায় আদিল খান ফ্রি-কিক থেকে শট নিলেও গোলের বাইরে চলে যায়। ১৩ মিনিটের মাথায় সুরেশের শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কুড়ি মিনিটের মাথায় হামতেও গোলের সুযোগ তৈরি করেও আটক হয়ে যান।

আদিল খান প্রথম এগারোয় থাকায় এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সকে এ দিন কিছুটা হলেও আগের চেয়ে ভাল লেগেছে। গত ম্যাচেও অবশ্য তাদের রক্ষণ ভাল খেলে এবং হায়দ্রাবাদের মতো দলকে রুখে দেয়। কৃতিত্ব দেওয়া উচিত মাঝ মাঠকেও। এদিন প্রিন্স ইবারাকে আটকে রেখে ক্লেটন সিলভার জন্য গোলের পাসগুলোকে বারবার আটকে দেন লাল-হলুদ মিডফিল্ডাররা। সেই কারণেই প্রথমার্ধে ক্লেটনকে এ দিন ম্লান লাগে।

সেট পিসে শুরু থেকেই ভাল এ বারের লাল-হলুদ বাহিনী। ২৮ মিনিটের মাথায় সে রকমই এক সেট পিস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তরুণ ফরোয়ার্ড সেম্বয় হাওকিপ। ডান দিকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত ক্রস দেন ওয়াহেংবাম লুয়াং। প্রথম পোস্টের সামনে উড়ে আসা এই বল সামনে ডাইভ দিয়ে কপাল দিয়ে ফ্লিক করে বলের গতিপথ বদলে ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে গোলে পাঠিয়ে দেন বেঙ্গালুরু এফসি-রই প্রাক্তন ফুটবলার সেম্বয়।

এই গোল খাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই অবশ্য প্রিন্স ইবারা বিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোলের সুযোগ পেয়ে যান পরাগ শ্রীবাস্তবের ক্রস থেকে। সেই সময়ে ইবারাকে আটকানোরও কেউ ছিল না। কিন্তু তিনি অফ সাইডে থাকায় তাঁর এই চেষ্টা বিফলে যায়। রেফারি বাঁশি না বাজালে সেই মুহূর্তেই গোল শোধ হয়ে যেত হয়তো।

৪১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন চিমা। বিপক্ষের গোলের সামনে হামতের লং বলে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে গোল ছিল অবধারিত। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে ইবারা ও সিলভা দু’জনেই বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। ইবারা তাঁর সতীর্থকে বল দিলেও সিলভাকে ঘিরে ধরে তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা।

বিরতির পরে জয়েশ রানের জায়গায় মাঠে নামেন সুনীল ছেত্রী। প্রতীক চৌধুরি মাঠে নামেন পরাগের জায়গায়। রেনেডি সিংও মহেশের জায়গায় নামান অমরজিৎ সিং কিয়ামকে। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের আধিপত্য রেখেই শুরু করেন ছেত্রীরা। তবে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেন হীরা মন্ডল, আদিল খানরা। ক্রমশ চাপ বাড়াতে শুরু করে বেঙ্গালুরু। এবং ৫৬ মিনিটের মাথায় সমতা এনে ফেলে বিএফসি। তবে সৌরভ দাসের নিজ গোলে।

বিপক্ষের ফ্রি কিকে উড়ে আসা বলে হেড করে ক্লিয়ার করতে যান সৌরভ দাস। কিন্তু লাফিয়ে ওঠা সৌরভের মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় গোলে। অরিন্দম বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের নাগাল পেয়েও দলকে বাঁচাতে পারেননি।

গোলশোধ করার পর ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরু এফসি। ঘন ঘন হওয়া তাদের আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে লাল-হলুদ রক্ষণ। ৭২ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে একটি মাইনাসে বক্সের মধ্যে থেকে গোলে শট নেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তাঁর শট গোললাইনে দাঁড়িয়ে সেভ করেন হীরা।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় সারাক্ষণই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে এসসি ইস্টবেঙ্গল। মাঝে মাঝে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও কোনওটিই দানা বাঁধতে পারেনি। বরং উল্টোদিক থেকে ঘন ঘন আক্রমণ আসতে থাকে তাদের দিকে। ৯০ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের সামনে একটি ফ্রি কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। স্টপেজ টাইমে কর্নারও আদায় করে নেয় এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তাও বাঁচিয়ে নেন বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত।