উৎসবের আলোর মাঝেও একরাশ অভিমান বো-ব্যারাকে

এনএফবি, কলকাতাঃ

কলকাতার মাঝে অন্য এক মিনি ভারত। পার্কস্ট্রিট, সেন্ট পলস, ক্যাথিড্রালের মতোই বড়দিনের মরশুমে শহুরে বাসিন্দাদের অন্যতম ডেস্টিনেশন বো-ব্যারাক। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে হেয়ারস্ট্রিট থানার পাশ দিয়ে গলি রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে ইতিহাস বুকে নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে লাল টুকটুকে ইটের বুড়ো হওয়া বাড়ির ছোট্ট এক গলি। ডিসুজা, ডিরোজিও, ক্রিস্টোফার অগাস্টিনের মহল্লা। শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সৈন্যদের জন্য এই ব্যারাকের পত্তন হয়েছিল। বর্তমানে এখানে ৩২টি পরিবারের বাস।

মহামারির চোখ রাঙানিতেও ক্রমশ ক্ষীয়মান অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সমাজের দলিল এই পাড়া যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে বড়দিন উদযাপনে। ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন আর আলোর রোশনাই-এ সেজে উঠেছে। বাসিন্দাদের নিজের হাতে তৈরি কেক, ওয়াইন এখানকার বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ। যা কিনতে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

করোনার কারণে বিগত বছরে উৎসব তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল ‘বো-ব্যারাক ফেস্ট’। নিজেদের মধ্যেই পালিত হয়েছিল উৎসব। তবে বিধি মেনেই এই বছর হচ্ছে সেই ফেস্ট। ২১ তারিখে পালিত হয়েছে ‘ মিউজিক্যাল নাইট’। ২৪ তারিখ স্থানীয় শিশুরা তৈরি করেছে ক্রিসমাস ট্রি। ২৮ তারিখ বয়স্কদের জন্য অনুষ্ঠান।

২৫ ডিসেম্বর দুপুর ২ টা নাগাদ এলাকায় পৌঁছে দেখা গেল উৎসাহী দর্শকদের ভিড় বাড়ছে ধীরে ধীরে। উৎসবের মেজাজে কচিকাঁচা থেকে বয়স্করাও। কথা বলতে গেলে জানালো সন্ধ্যায় আসুন।

সন্ধ্যায় পৌঁছে দেখা গেল গানের সুরে উৎসবের মেজাজ। উৎসবের আয়োজন যে চাতালে হয় তার একপাশে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা অন্যপাশে পার্সি ধর্মশালা। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য।


তবে উৎসবের মাঝেও রয়েছে একরাশ অভিমান। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি শুনেই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেল। বয়স্ক এক বাসিন্দার সাথে কথা বলা শুরু করতেই তিনি জানিয়ে দিলেন, ব্যস্ত আছি। এক কিশোরের সাথে আলাপ জমাতেই মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল ক্যামেরার সামনে সে কিছু বলবে না। কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানিয়ে দিল, বাংলা সে জানে না। তবে উৎসবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাতে ভুলল না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আজও ‘অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান’ তকমা ঘুঁচে কলকাতাবাসী হয়ে উঠতে না পারায় এত আলোর ভিড়েও তাদের বুকে জমে আছে একরাশ অভিমান।