এনএফবি,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
গত এক সপ্তাহে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট-জশাড় লোকাল রোডে বাইক, টোটো ও মেশিন ট্রলি সহ একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ যাত্রী ও পথচারী মিলিয়ে প্রায় দশজন গুরুতর জখম হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ৷ পাশাপাশি গত তিন বছরে বাইক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের যমজ ভাই ও প্রেমিক প্রেমিকা সহ সতেরো জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। সব ঘটনা গুলোর পিছনেই রয়েছে অসতর্কতা, অসাবধানতার পাশাপাশি মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর ঘটনা । সম্প্রতি পথদুর্ঘটনায় স্থানীয় মানুষ জন থেকে ছাত্রছাত্রী এবং বয়স্করা পথ চলতে ভয় পাচ্ছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ- বিক্ষোভের সাথে মিটিং মিছিল এবং পুলিশেও দরবার করা হয়েছে।
এই অবস্থায় কোলাঘাট নতুন বাজারের একটি পুজো কমিটি তাদের পুজো উৎসবের নির্ধারিত কিছু কর্মসূচি কাটছাঁট করে পথদুর্ঘটনা রোধে মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে নিয়ে পথ পরিক্রমা, পথসভা, ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে পথনিরাপত্তা বিষয়ক বক্তব্য প্রতিযোগিতা, কুইজ, অঙ্কন প্রতিযোগিতা সংগঠিত করছে। আয়োজক কমিটি সারা পূজাপ্রাঙ্গণ ঘিরে গড়ে তুলেছে প্রদর্শনী। বিভিন্ন দুর্ঘটনার ছবি, ট্রাফিক আইনের খুঁটিনাটি, নানা তথ্য এবং আলোকচিত্রে স্লোগানে পোস্টার- ব্যানারে পথনিরাপত্তার জোরদার বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কমিটির পক্ষে সৈকত দাস জানালেন, কেবল কোলাঘাটেই নয়, সারা রাজ্য তথা দেশজুড়ে প্রতিনিয়ত পথ দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ঘটে যাচ্ছে বর্ণনাতীত সব মর্মান্তিক ঘটনা। এর অন্যতম কারণ হল অসচেতনতা, অসাবধানতা, অজ্ঞতা এবং বেপরোয়া বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো। পথের নিয়ম শৃঙ্খলা না মেনে চলা আমাদের পঞ্চাশতম বর্ষের শারোদ উৎসবের পূর্ব নির্ধারিত কিছু ভাবনা বাদ দিয়ে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। মানুষের মনে প্রাণে এখন উৎসবের মেজাজ। রাস্তায় মন্ডপে বহু মানুষের সমাগম ঘটবে। তাই আমরা সচেতনতার বার্তা দিতে এই সময়েই এই ধরণের উদ্যোগ নিয়েছি। এই দিন প্রায় শতাধিক ছেলেমেয়ে পথনিরাপত্তার স্লোগান নিয়ে হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে পথপরিক্রমা করে। এরপর পথনিরাপত্তা বিষয় নিয়েই অঙ্কন, কুইজ ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ক্ষুদে আঁকিয়ের দল রঙ তুলির আচঁড়ে পথনিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে আঁকার চেষ্টা করেন। ক্ষুদে বক্তারা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য রেখে সবাইকে অবাক করে দেয়। যতজন অংশ নিচ্ছেন তাদের সবার হাতেই পূজা স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ডি জে র মত শব্দদানব ও বিকট শব্দের অতসবাজি, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বাল্য বিবাহ রোধ নিয়েও পোস্টার ব্যানার প্রদর্শনী সহ লাগাতার প্রচার চলছে পূজা অঙ্গন হতে। অন্য দিকে এই সম্বন্ধে শিক্ষক বিশ্বনাথ মাইতি জানান, আমরা সব কিছুই জানি কিভাবে পথ চলতে হয়, কিন্তু তাও আমরা ভুল করি, আর এই ভুলের মাশুল অনেককে দিতে হয়েছে ৷ তাই আগামী দিনে যাতে এই ভুল না হয় সেই বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ ৷ অন্যদিকে এই বিষয় নিয়ে অসীম দাস বলেন, বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ উৎসবের বহু মানুষের সমাগম হয়, এই সময় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং দুর্ঘটনাকে এড়াতে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, এতে প্রায় ২০০ জন যুবক অংশ গ্রহণ করেছে, বক্তব্য রেখেছে পথ নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে, তবে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েই যাচ্ছে ৷ কারণ বহুবার প্রশাসনের তরফ থেকে দুর্ঘটনাকে এড়াতে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণেই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা, প্রাণ যাচ্ছে বহু মানুষের, তবে পুজো উদ্যোক্তাদের এই কর্মসূচিতে আদৌ কি সচেতনতার বোধ তৈরি হবে সাধারণ মানুষের, তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েই যাচ্ছে ৷