এনএফবি, বিনোদন ডেস্কঃ
সুরই পারে বিভেদের বিভাজিকা মুছে মানবিকতার সার্বজনীন বার্তা পৌঁছে দিতে। বাংলার দুই কবি যাঁদের নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় সেই রবীন্দ্র নজরুলের গানে কন্ঠ মেলালেন দুই পারের দুই বাঙালি গায়িকা। এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে বাংলা গানের বিশ্বজনীন ঐতিহ্যেকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন ইমন চক্রবর্তী এবং ফারজানা সিফাত। দুই সঙ্গীত শিল্পী সুর মিলিয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মনে কী দ্বিধা..’ এবং নজরুলগীতি ‘সে চলে গেছে… ‘-র গানে। গানটি শোনা যাবে ‘সারেগামা বেঙ্গলি‘-র ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ফারজানা বর্তমানে বসবাস করেন ইংল্যান্ডে। অন্যদিকে এপার বাংলার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী ইমন। রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুলগীতির এই আন্তর্জাতিক মেলবন্ধন শুধু ভাবনায় নতুনত্ব তা নয় পরিবেশন আঙ্গিক থেকে শুরু করে উপস্থাপন সব কিছুতেই যেন এক মাইল ফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
সঙ্গীতের এই “মেলবন্ধন” এর মূল ধারণাটি এক গভীর প্রভাবকে তুলে ধরে। এটি বিভিন্ন সঙ্গীত এবং কাব্যিক ঐতিহ্যের একটি সুন্দর সংমিশ্রণ তৈরি করে। যা মানুষের ও সর্বস্তরের শিল্পীদের ব্যক্তিগত পার্থক্যগুলোকে অতিক্রম করে এক সম্মিলিত শ্রুতিমধুর পরিচয়ও সৃষ্টি করে। এই সংমিশ্রণ শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকেই সমৃদ্ধ করে না। বরং বাংলা সঙ্গীত এবং সাহিত্য সম্পর্কে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এর বৈচিত্র্য এবং গভীরতাকে আনন্দের সাথে উদযাপন করে।এইধরনের উদ্যোগ দুই বাংলার মানুষ ও শিল্পী সম্প্রদায়কে একত্রিত করে এক অনন্যা সাংস্কৃতিক গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করবে। শিল্পের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক আঙ্গীনায় ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়ে থাকবে এই উদ্যোগ।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে ফারজানা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এই গানগুলি বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী মূল্য বহন করে। যা আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীতের মূল্যবোধ ও মনোভাবের মধ্যে তুলে ধরতে চাই।” পাশাপাশি তিনি জানান, “আমার এই যৌথ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গীতের এক অসাধারণ বৈচিত্র্য প্রদর্শন করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রবিঠাকুর এবং নজরুলের গান একত্রিত করে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাংলা সঙ্গীত এবং সাহিত্যের বহুমুখী ঐতিহ্যকে প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত করা যায়। শুধু সাংস্কৃতিক বর্ণনই নয় বরং বাংলার যৌথ ঐতিহাসিক ঐতিহ্যগুলির সঙ্গে এক আত্মিক মেলবন্ধন গড়ে তোলা যায়।”
উল্লেখ্য, ফারজানা খুব অল্প বয়স থেকেই সঙ্গীত শিক্ষার যাত্রা শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম থাকার সুবাদে নজরুল সঙ্গীতের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে খুব সুবিধা হয়েছে। নজরুল ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ থেকে নজরুল সঙ্গীতের উপর ডিপ্লোমা করেছি। সুধীন দাস ও সেহেরাব হোসেন ছিলেন আমার গুরু।” তিনি বলেন,”পরবর্তীতে বিলেতে এসে যখন সঙ্গীত শিক্ষকের পেশায় যুক্ত হই, তখন লন্ডনের নতুন প্রজন্মকে কীভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুলসঙ্গীতে উৎসাহিত করা যায় তা ভাবছিলাম। কথা, সুর ঠিক রেখে শুধু আয়োজনটা বদলে দিলেই নতুনরা আকৃষ্ট হয়। সেটা প্রমাণিত হয় আমার অন্যান্য কাজে। আর এটাই উৎসাহিত করেছে এই উদ্যোগে।”