অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
আইএসএলে প্রথম জয়ের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করল এসসি ইস্টবেঙ্গল। বৃহস্পতিবার বাম্বোলিমে অবশ্য হায়দরাবাদ এফসি-কেও জিততে দিল না তারা। গত ছয় ম্যাচে যে ঝকঝকে পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছিল নিজামের শহরের দলের, তা যেন কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে যায় এদিন। যার জেরে কোনও দলই জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। ফল ১-১।
কুড়ি মিনিটের মাথায় স্লোভেনিয়ান মিডফিল্ডার আমির দার্ভিসেভিচের মাপা ফ্রি কিক থেকে পাওয়া দুর্দান্ত গোলে এসসি ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট পরে হেডে গোল করে সমতা আনেন হায়দরাবাদ এফসি-র নাইজেরিয় ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। এদিন ড্যানিয়েল চিমা ও বলওয়ন্ত সিং কার্যত ফাঁকা গোলের বাইরে বল না পাঠালে হয়তো লিগের প্রথম জয়টা পেয়ে যেত তারা। অর্থাৎ, টানা আটটি ম্যাচে জয়হীন থাকল লাল-হলুদ শিবির। তবে সমর্থকেরা এই ভেবে খুশি হতে পারেন যে, আগের চেয়ে তাদের প্রিয় দল এদিন ভাল খেলেছে।
তবে লিগ তালিকায় হায়দরাবাদের দুই নম্বরে ওঠা আটকাতে পারল না কলকাতার দল। সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্ট পেয়ে গোল পার্থক্যের বিচারে তারা উঠে এল মুম্বই সিটি এফসি-র পরবর্তী স্থানে। অন্য দিকে, আট ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়ে এগারো নম্বরেই রয়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল।
২০ মিনিটঃ এসসি ইস্টবেঙ্গল ১-০। বক্সের একেবারে সামনে বাঁ দিকে ফ্রি কিক থেকে সোজা গোলে শট নেন দীর্ঘদেহী স্লোভেনিয়ান মিডফিল্ডার দার্ভিসেভিচ যা প্রথম পোস্টের দিক দিক দিয়েই গোলে ঢুকে পড়ে।
২৮ মিনিটঃ সিটার মিস চিমার। মাঝমাঠ থেকে হামতের পা থেকে আসা বল পেয়ে একা বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে বল মারেন নাইজেরিয়ান।
৩৫ মিনিটঃ ১-১। বাঁ দিকের উইং থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন হায়দরাবাদের গোলমেশিন ওগবেচে।
৪০ মিনিটঃ ফের গোল মিস লাল-হলুদের। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া মহম্মদ রফিকের জোরালো শট বারে লেগে ফিরে আসে।
৮২ মিনিটঃ সুযোগ নষ্ট। ডান দিক থেকে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে নিখুঁত ক্রস বাড়ান রফিক। গোলকিপারের হাতে লেগে বল আসে বলওয়ন্তের কাছে, কিন্তু তিনি হেড করে প্রায় ফাঁকা গোলের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন।
৮৫ মিনিটঃ বক্সের বাইরে থেকে সাহিল তাভোরার জোরালো শট সোজা চলে যায় অরিন্দমের হাতে।
এদিন প্রত্যাশিত ভাবেই শুরু থেকে বিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় হায়দরাবাদ এফসি-র খেলায়। শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলটি যে সাত ম্যাচে জয়হীন প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রথম ১৮ মিনিট কার্যত এসসি ইস্টবেঙ্গলের অর্ধেই খেলাটা হয়। হায়দরাবাদের বল পজেশনও ছিল ষাট শতাংশের ওপর।
১৯ মিনিটের মাথায় প্রথম ইতিবাচক প্রতি আক্রমণে ওঠে এসসি ইস্টবেঙ্গল এবং বক্সের সামনে গোলমুখী লালরিনলিয়ানা হামতেকে ফাউল করেন চিঙলেনসানা সিং। এই ফাউল থেকেই ফ্রি কিক পায় এসসি ইস্টবেঙ্গল, এবং সেই ফ্রিকিকেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন আমির দার্ভিসেভিচ। যিনি এর আগেও হাওয়ায় ভাসানো ফ্রি কিকে গোল করেছেন।
বক্সের সামনে বাঁ দিক থেকে সোজা গোলে শট নেন দীর্ঘদেহী স্লোভেনিয়ান মিডফিল্ডার, যা প্রথম পোস্টের দিক দিয়েই গোলে ঢুকে পড়ে। হায়দরাবাদের গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি আর একটু তৎপর হলে হয়তো গোলটা বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু দার্ভিসেভিচের শটে যে গতি ছিল, সেই গতি রোখা প্রায় অসম্ভব ছিল। উড়ে যাওয়া বল তাঁর হাতে লেগে গোলে ঢুকে যায়।
অসাধারণ এই গোলের পরে স্বাভাবিক ভাবেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন এবং আগের চেয়ে বেশি আক্রমণে উঠতে শুরু করে। এমনই এক প্রতি আক্রমণে ব্যবধান বাড়ানোর অসাধারণ সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেন ড্যানিয়েল চিমা। মাঝমাঠ থেকে হামতের পা থেকে আসা বল পেয়ে একা বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন চিমা। সামনে ছিলেন শুধু বিপক্ষের গোলকিপার। এই অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় গোলে বল ঠেললেই যেখানে কার্যসিদ্ধি হয়ে যেত, সেখানে তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন। অবধারিত গোলের সুযোগ এর আগেও বহুবার নষ্ট করেছেন যে ভাবে, সে ভাবেই এদিনও দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন চিমা। এর পরেও বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে তা এতটা সহজ ছিল না।
লাল-হলুদের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের এই ভুলের খেসারত এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দিতে হয় ৩৫ মিনিটের মাথায়, বিপক্ষের নাইজেরিয়ান তারকার তৎপরতায়। বার্থোলোমিউ ওগবেচের হেডের গোলে সমতা আনে হায়দরাবাদ। বাঁ দিকের উইং থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন হায়দরাবাদের গোলমেশিন। উড়ে আসা বল হেড করে ক্লিয়ার করতে পারতেন ওগবেচের সামনে থাকা রাজু গায়কোয়াড়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবেই তিনি বলের ফ্লাইট মিস করেন এবং সেই সুযোগই কাজে লাগান ওগবেচে, চলতি লিগে যাঁর ছ’গোল হয়ে গেল।
এই গোলের পাঁচ মিনিট পরে ফের ব্যবধান তৈরির সুযোগ হাতছাড়া হয় লাল-হলুদ বাহিনীর। তবে এবার বরাতজোড়ে গোলে বল রাখতে পারেননি মহম্মদ রফিক। ৪০ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর জোরালো শট বারে লেগে ফিরে আসে। গত পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থাকা হায়দরাবাদ এই ম্যাচে খুব একটা উদ্বুদ্ধ ফুটবল খেলতে পারেনি। এই সুযোগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে এসসি ইস্টবেঙ্গল কিন্তু একশো শতাংশ কাজে লাগাতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ব্যবধান তৈরি করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে হায়দরাবাদ এফসি। ৫১ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ওঠা আকাশ মিশ্র জয়নার লরেঙ্কোকে পরাস্ত করে বক্সে ঢুকে সাইড নেটে শট মারেন। এর দু’মিনিট পরেই জোয়েল চিয়ানিজের ক্রস থেকে সুযোগ পেয়ে যান এডু গার্সিয়া। কিন্তু তাঁর শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে গোলের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ডান দিক দিয়ে অনিকেত যাদব ও বাঁ দিক দিয়ে আকাশ মিশ্র বল নিয়ে উঠে বারবার ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের।
৬৪ মিনিটের মাথায় আক্রমণে গতি বাড়ানোর জন্য চিমাকে বসিয়ে বলওয়ন্তকে মাঠে নামান কোচ দিয়াজ। একই সঙ্গে অমরজিৎকে বসিয়ে সেম্বয় হাওকিপকে নামান তিনি। অন্য দিকে, জোয়েল চিয়ানিজকে বসিয়ে হাভিয়ে সিভেরিওকে নামান মার্কেজ। এডু গার্সিয়াকে তুলে হুয়ানানকেও নামান তিনি। ফরোয়ার্ড আরেন ডিসিলভাকেও নামান হায়দরাবাদের কোচ। দুই কোচের কৌশলের চরম লড়াই শুরু হয় এই পরিবর্তনগুলির পর থেকেই। আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের লড়াইও দেখা যায় এর পর থেকেই।
শেষ দশ মিনিটে জয়সূচক গোলের উদ্দেশ্য নিয়ে আরও এক দফা পরিবর্তন করেন এসসি ইসিটবেঙ্গলের কোচ দিয়াজ। রাজুর জায়গায় নামেন ড্যানিয়েল গোমস। হামতের জায়গায় নাওরেম মহেশ এবং দার্ভিসেভিচের জায়গায় ওয়াহেংবাম লুয়াং। ৮১ মিনিটের মাথায় গোলমুখী বলওয়ন্তকে ফাউল করে আটকান চিংলেনসানা। ফ্রিকিক থেকে আবশ্য লাভ আদায় করতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী।
পরের মিনিটেই ডান দিক থেকে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে নিখুঁত ক্রস বাড়ান রফিক। গোলকিপার এগিয়ে এসে বলের দখল নিতে চেষ্টা করেও পারেননি। তাঁর হাতে লেগে বল আসে বলওয়ন্তের কাছে, কিন্তু হেড করে প্রায় ফাঁকা গোলের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন।
শেষ পাঁচ মিনিটে জয়ের গোল তুলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে হায়দরাবাদ। ৮৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে সাহিল তাভোরার জোরালো শট সোজা চলে যায় অরিন্দমের হাতে। ৮৭ মিনিটের মাথাতেও ওগবেচের বাঁ পায়ে নেওয়া শটও বাঁচিয়ে নেন অরিন্দম।
সাত মিনিটের যে বাড়তি সময় দেওয়া হয়, সেই সাত মিনিটে হায়দরাবাদ সমানে চাপে রাখে বিপক্ষকে। তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলের আঁটোসাঁটো রক্ষণ তাদের কাঙ্খিত জয় থেকে দূরেই রাখে।