শতাব্দী প্রাচীন চৌধুরীদের দুর্গা পুজোয় আজও বন্দুকের গুলি ফাটিয়েই সূচনা হয় সন্ধিপুজোর

এনএফবি,বালুরঘাটঃ

পাগলীগঞ্জের বৈদ্যুল গ্রামের চৌধুরীদের ১১২ বছরের পুরোনো পুজোয় বন্দুকের গুলি ফাটিয়েই শুরু হয় সন্ধিপুজো। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে পুজোয় বন্দুক কেন ? আসলে পরাধীনতার যুগে গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত ছিল ” কাঠের বন্দুক থেকে গুলি বেরয় না “। কিন্তু আসলে যে তা নয় সেটা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা ও এলাকার ডাকাত ও চোরেদের হামলা রুখতেই বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার চল এই পুজোর শুরুর দিন ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয়ে যেতো ৷ চৌধুরী পরিবারের যত বন্দুক রয়েছে, তা দুর্গা প্রতিমার সামনে রাখা হয়। একদিকে যেমন বৈদ্যুল গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রামগুলির মানুষজন মা দুর্গাকে দর্শন করতে এসে চৌধুরীদের পুজোয় তা দেখতে পায়। অন্যদিকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন ও ছিল পুজোর একটা অঙ্গ।
কথায় বলে সে রামও নেই আর সেই অযোধ্যাও নেই ৷ কিন্তু এই পুজোয় সেই চিরাচরিত প্রথা আজও মেনে চলছেন চৌধুরী বাড়ির বংশধরেরা।

বর্তমান চৌধুরী বংশের উত্তরাধিকারী মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী জানান, সন্ধি পুজো শুরু করার সময় শূন্যে গুলি ছোড়ার রেওয়াজ আছে আজও যেমন ,পাশাপাশি তেমনি এই পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। পুজোর ক’দিন অন্ন ভোগের চল নেই রয়েছে ফলফলাদি লুচি সুজির ভোগ নিবেদনের নিয়ম । তবে দশমীর দিন অন্ন ভোগ মা কে নিবেদন করা হয়। যারা পুজোর এই কদিন উপোস থেকে মায়ের পুজো করে থাকেন তারা এই দশমীর দিন অন্ন ভোগ প্রসাদ পাবার জন্য মুখিয়ে থাকে। বলি প্রথা এই পুজোয় নেই তবে দশমীর দিন কুমড়ো পুজো দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো যেমন প্রাচীন ঠিক তেমনই একাধিক পুরনো রীতি ও নিয়মকে এখনও মানা হয় এই পুজোর সময়।বাড়ির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বিরাট দুর্গা মন্দির। এক সময় এলাকার নামজাদা সব চন্ডী গান পালার গায়কদের আসর বসত এই পুজোর চারদিন ধরে । এখন অবশ্য সে সব অতীত। তবুও পুজোর চারদিন এলাকার বর্তমান পালা গানের গায়করাই পালা করে চন্ডীর গান গেয়ে থাকেন। পুজোর জৌলুস কিছু কমলেও ঐতিহ্য আর পরম্পরা বাঁচিয়ে রেখেছেন পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।এছাড়াও পুরোনো ঐতিহ্যকে মান্যতা দিয়েই একাধিক নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে এই পুজো করা হয়। এছাড়াও নিত্য দিনের পুজো চলে সারা বছর ধরে।এলাকার বাইরে থেকেও অনেকে বৈদ্যুলের এই চৌধুরী বাড়ির বনেদী পুজো দেখতে হাজির হন। মহাষ্টমীর অঞ্জলিতে ভিড় উপচে পড়ে। দশমীর দিন সূর্য ডোবার সন্ধিক্ষণে কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে গিয়ে দেবীর নিজের পুকুরে বিসর্জন দেওয়ার রীতি রয়েছে।

প্রতিবছরই এই পুজোর সময় উপস্থিত হয় পরিবারের সমস্ত সদস্যরা। ক্লাব বারোয়ারির জাঁকজমকপূর্ণ পুজো যতই থাকুক না কেন দূর দূরান্ত থেকে অন্তত একবার বৈদ্যুলের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে গ্রামবাসীরা আসবেনই।