এনএফবি বহরমপুরঃ
আরজি কর-কাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না বলে সোমবার বহরমপুরের নাগরিক সমাজ সরব হলেন। শহরের টেক্সটাইল কলেজ মোড় চত্বরে উপস্থিত প্রায় হাজার খানেক মানুষ শ্লোগানে শ্লোগানে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া বার্তা পাঠালেন— “মানছি না, মানব না, উৎসবে আর ফিরছি না।” নব্বই পেরনো রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অমৃত গুপ্তও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “আমি আমৃত্যু তোমাদের আন্দোলনের শরিক।” এমনকি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের গণ ইস্তফার পরিকল্পনাতেও সমর্থন জানান তারা।
এই আবেগময় কর্মসূচির মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, যেখানে জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ তারিখ বিকেল ৫ টার মধ্যে কাজে ফিরতে বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের এই নির্দেশ এবং সিবিআইয়ের তরফে কোনও রিপোর্ট জমা না পড়ার ফলে জনসাধারণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুজোতে ফিরে আসার আহ্বান আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
এই প্রসঙ্গে ড. সোমদত্তা চক্রবর্তী “যাদের জন্য এই বিচার বিচার খেলা চলছে তাদের সবাইকে জানাচ্ছি ধিক্কার। যারা সেদিন সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছেন এবং যাদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয় এই ঘটনা ঘটেছে এবং বিচারের নামে যে প্রহসন চলেছে তাকে আমরা ধিক্কার জানাই। একদিকে যখন সবার চোখে জল তখন বলছে না উৎসবে ফিরুন কিসের উৎসব আমরা উৎসব চাই না আমরা বিচার চাই বহরমপুরবাসী বিচার চাই”
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তনী স্নিগ্ধা সেঠ বলেন “আমরা ভেবে পাচ্ছি না আমার ঘরের সন্তান যখন নেই মানুষ উৎসবে মাতবে কি করে! আজকে এই যে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে এই জনবিস্ফোরণকে তারা ভয় পাচ্ছেন আর ভয় পাচ্ছেন বলে আজকেই তারা ক্লাবগুলোকে টাকা নেয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন যাতে মূল বিষয় থেকে মানুষ দূরে সরে যায়। আমরা প্রাক্তনীর পক্ষ থেকে এইটুকু সাধারণ মানুষের কাছে বলতে চায় আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি এবং প্রয়োজনে জনগণের এই যে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এই আন্দোলনকে যতটা প্রতিরোধের স্তরে নিয়ে যেতে হয় এই বাংলার মানুষ নিয়ে যাবে কারন এই বাংলা হচ্ছে ক্ষুদিরাম বিনয় বাদল দীনেশের বাংলা যেটা আমরা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না।যেমন যেমন দমন পীড়ন ডাক্তারদের উপর মানুষের উপর যদি সরকার মনে করে চাপিয়ে নেই তাহলে এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন তাদের বলছি ইতিহাসের লেখাটা পড়ুন যারা অন্যায়ের পক্ষে থাকে তারা কোনদিন জয়লাভ করে না। আমরা মনে করি রাজ্যের সর্বোচ্চ কর্তীর এই আবেদনে তারা সাড়া দেবে না তারা এই আন্দোলনকে চালিয়ে যাবে আমরাও প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে এই আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাব যতটা প্রতিরোধের স্থানে নিয়ে যেতে হয়।
বহরমপুরের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। সুগত সেন বলেন, “আমাদের নিজেদের বিচার আদায় করতে হবে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে। কেবল সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনও বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।”
এই প্রাক্তনীদের অবস্থান বিক্ষোভের অন্যতম উদ্যোক্তা দেবজ্যোতি বিশ্বাস বলেন “আমরা, বহরমপুরসহ মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা, আরজি করের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এবং ন্যায়বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আজকের এই অবস্থান বিক্ষোভের আয়োজন করেছি। এর আগেও আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি। গত ২২ অগস্ট প্রায় ছয়-সাত হাজার মানুষের একটি মিছিল করেছিলাম, টেক্সটাইল মোড় থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত। এরপর আমরা স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়েছি এবং প্রায় ১০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা সুপ্রিম কোর্ট ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া আমাদের আশঙ্কায় ফেলেছে, তাই রাস্তায় থাকতে হবে।আমরা মনে করি এই ঘটনার যদি সঠিক সাজা না পাই তাহলে দুষ্কৃতীরা আরও দাপিয়ে বসবে”
রিমঝিম সিংহ, অমৃত গুপ্তের মতো বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এবং ঋত্বিক নাট্য সংস্থা ও বহরমপুর ইয়ুথ কয়্যারের সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যেও ছিল প্রতিবাদের সুর।