এনএফবি, স্পোর্টস ডেস্কঃ
ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে শনিবার প্লে অফের প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয় পেলেও সেই জয় ভাল ভাবে উপভোগ করতে পারলেন না এটিকে মোহনবাগানের কোচ ও ফুটবলাররা। কারণ, বিশাল কয়েথের চোট। শনিবার বিশালের মাথায় চোট লাগার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চোট গুরুতর কি না, পরীক্ষা করে দেখার জন্য। ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেকক্ষণ পরে হাসপাতাল থেকে ক্লাবের কর্তারা কোচকে অবশ্য জানান, বিশাল সুস্থ আছেন ও খেলার অবস্থায় আছেন। কিন্তু ততক্ষণ প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। সাংবাদিকদের ম্যাচ জয় নিয়ে প্রতিক্রিয়াও দিতে চাইছিলেন না শুরুতে। পরে অবশ্য প্রতিক্রিয়া দেন।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রীতিমতো দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২-০-য় জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। প্রথমার্ধে হুগো বুমৌস ও দ্বিতীয়ার্ধে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের গোলে এ দিন ম্যাচ জিতে নেয় তারা। যদিও অসংখ্য সুযোগ পেয়েছিল কলকাতার দল। সেগুলোর অর্ধেক কাজে লাগাতে পারলেও আরও বড় ব্যবধানে জিতত তারা। তবে ম্যাচ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই দলের তারকা উইঙ্গার আশিক কুরুনিয়ান চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান ও দ্বিতীয়ার্ধে মাথায় গুরুতর চোট পান গোলকিপার বিশাল।
ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে কোচ বলেন, “দলের এই জয়ে আমি পুরোপুরি খুশি নই। বিশাল হাসপাতালে রয়েছে। আশিকের চোটটাও গুরুতর। এই পরিস্থিতিতে জয়ের আনন্দ করা কঠিন। দলের ছেলেদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত। বিশালের কী হয়েছে আমি বুঝতে পারছি, আমি ওর কাছাকাছি ছিলাম ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওই সময় ওর চেতনা ছিল না। হাসপাতালে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। আমাদের কয়েকজন স্টাফ ওখানে আছে। তাদের সঙ্গে কথা হলে বুঝতে পারব ও ঠিক কেমন আছে এখন”।
পেট্রাটসের গোলের দু’মিনিট পর দিয়েগো মরিসিওর সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে মাথায় চোট পেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন বিশাল ও কয়েক সেকেন্ডের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়েন। মাঠের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন রেফারি। কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিশাল উঠে দাঁড়ালেও দলের ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি আর গোলে পাহাড়া দিতে পারেননি। অ্যাম্বুলেন্সে উঠে তিনি সোজা হাসপাতালে যান, যেখানে তাঁর মস্তিষ্কের পরীক্ষা হয়। ৬৬ মিনিটের মাথায় বিশালের পরিবর্তে নামেন অর্শ আনোয়ার শেখ।
বিশালের দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকা কোচ বলেন, “এই মুহূর্তে জেতা, হারা বা সেমিফাইনালে ওঠা কোনও কিছুই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফুটবল নিয়ে কথা বলার ইচ্ছাও নেই। দলের ছেলেদের সঙ্গে গত ছ’মাস ধরে রয়েছি। ওরা এখন আমার পরিবারের সদস্যদের মতোই হয়ে গিয়েছে। ওদের কিছু হলে আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারি না। কাল বিশাল যখন হাসপাতাল থেকে বেরোবে, সব কিছু ঠিকমতো মনে রাখতে পারবে, তখন এই জয় নিয়ে আনন্দ করতে পারব”।
পরে অবশ্য আবেগ ঝেড়ে ফেলে কিছুটা স্বাভাবিক হন কোচ ও সেমিফাইনালে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে বলেন, “দলের যা অবস্থা, আশিক, ব্রেন্ডান, গ্ল্যানরা অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এই সময় দল সেমিফাইনালের জন্য কতটা প্রস্তুত, তা বলা কঠিন। এই মুহূর্তে দলে নানা সমস্যা রয়েছে। ২-৩ দিনের মধ্যে খেলোয়াড়রা সবাই ফের চাঙ্গা হয়ে যাবে, আশা করি। এর আগেও দল কঠিন সময়ে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব দেখিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বার আমরা ভাল জায়গায় আছি কি না, তা বলা কঠিন। গতবার ওদের এমবাপে ছিল, আরও অনেকে ছিল। এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। দেখা যাক কী হয়”।
গতবার শেষ চারের লড়াইয়ে যাদের কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী, সেই হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধেই ফের সেমিফাইনালে নামতে হবে তাদের। আগামী ৯ ও ১৩ মার্চ গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকলে এটিকে মোহনবাগানকে রোখা যে বেশ কঠিন হবে, এ দিন যুবভারতীর গ্যালারিতে বসে তা ভাল ভাবেই বুঝে নিলেন হায়দরাবাদের কোচ মানোলো মার্কেজ।