এনএফবি,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
এ বারের সর্বভারতীয় জ্যাম (JAM) পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী হিসাবে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তারপরেও দুশ্চিন্তা কাটেনি। আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে রীতিমতো সঙ্কটে বালুরঘাটের দীপ দাস। বালুরঘাট কলেজের থার্ড ইয়ারে পড়াশোনার পাশাপাশি শিলিগুড়ি সেন্টার থেকে এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী সর্বভারতীয় জ্যাম (JAM) পরীক্ষায় বসেছিল দীপ। ৮০৯ র্যাংক পেয়ে মুম্বাই আই আই টিতে অংক নিয়ে এম এস সি পড়ার সাফল্য অর্জন করলেও তার এই সাফল্য হয়তো অধরাই থেকে যাবে অর্থের অভাবে। আগামী ২১ জুলাই মুম্বাইয়ে আই আই টি তে রিপোর্ট করার পাশাপাশি চারটি সেমিস্টার বাবদ ২ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তির ৫০ হাজার টাকা ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে জমা করতে না পারলে এই সাফল্য তার অধরাই থেকে যাবে সামান্য দিনমজুর পরিবারের সন্তান দীপ দাসের।
কিন্তু মুম্বাই গিয়ে পড়াশোনা চালাতে ও আই আই টি র মত নাম করা ইনস্টিটুয়েশনে ভর্তি হতে গিয়েই হোঁচট খেতে হচ্ছে দীপকে প্রতি পদে পদে। কারণ সে দরিদ্র। দীপের বাবা গোবিন্দ দাস সামান্য ঠেলাওয়ালা ।মা কামনা দাস পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। বালুরঘাট শহরের খাদিমপুর বটতলা এলাকার শিবাজি কলোনীর বাসিন্দা দীপ দাসদের টিনের ঘর ও সম্প্রতি সরকারি সাহায্যে গড়ে তোলা একটি ঘরে বসবাস। দুই ভাইবোনের মধ্যে বোনের ধারদেনা করে কোনরকমে বিয়ে দিয়েছে তার বাবা মা। তা সত্বেও ছেলের পড়াশোনা যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য নিজেরা বাড়িতি পরিশ্রমের পাশাপাশি ধার দেনা করে এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসার ফিস ১০ হাজার টাকাও জুগিয়েছেন তার মা। কিন্তু সেই টাকাই এখনও শোধ করে উঠতে পারেন নি তারা। সেখানে মুম্বাই গিয়ে দীপের পড়াশোনা চালানোর টাকাই বা কেমন করে পাবেন আর তার জন্য দুই লক্ষ টাকা কোথায় পাবেন। সে নিয়ে ঘোর অন্ধকারে তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকেও খুব ভাল ফল করেছিল দীপ। তখনও অর্থাভাবে পড়া ছেড়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সঙ্কটের সেই সময় পাড়া প্রতিবেশি ও স্কুলের শিক্ষক মহল ,দীপের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। স্কুলের তরফেও নানা ভাবে সাহায্য করা হয়েছিল মেধাবী ছাত্রটিকে। কিন্তু এখন সে দু’তরফেই সাহায্যের সুযোগ নেই। এত কষ্টের মধ্যেও সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্য এলেও, এবার মুম্বাই গিয়ে আই আই টিতে ভর্তি হওয়া দীপের অনিশ্চিত তার ভবিষ্যৎও।
শৈশব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা। কোনো কোচিং কিংবা প্রাইভেট সে তো দূর অস্ত নিজেই বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে বই নিয়ে আর নেট থেকে পড়াশোনা করে নিজে এই প্রস্তুতি নিয়েছে । সাফল্যও এসেছে। সুযোগ পেয়েছে দেশের অন্যতম সেরা ইন্সটিটিউটে পড়ার। কিন্তু শৈশবের ইচ্ছা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে অর্থাভাবে। ভর্তি এবং পরের কয়েক বছর পড়ার খরচ যোগানোই এখন দীপ দাসের মূল চিন্তা।
যদিও তার মা কামনা দাসের আর্তি, ” সামান্য আয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারি না। ওর বাবা ঠেলা চালায় আর আমি নিজে পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করি। মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার দেনা করে ছেলেটার ফরম ফিলাপের ১০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম। এখন মুম্বাইয়ে ভর্তি করাব কীভাবে? যদি কোন সুহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা এগিয়ে এসে ওকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবেই ওর এই পড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে ওর এই পরিশ্রম ভরা স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। বাস্তবে রুপান্তরিত হবে না।”