জামশেদ পুত্র নায়ক হবেন কি শনিবারে!

chima

এক্সক্লুসিভ স্টোরি

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

শনিবার ডার্বিতে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নামবেন একজন ড্যানিয়েল চিমা। প্রাক্তন নাইজেরীয় তারকা ফুটবলার চিমা ওকোরির সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও চিমা নামের মাহাত্ম্যের জন্যই সমর্থকদের নজরে থাকবেন ড্যানিয়েল চিমা চুকুউ। আর সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে যদি মাঠে নামেন কিয়ান নাসিরি তা হলে তাঁর কাছ থেকেও কি বাড়তি কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন সমর্থকেরা, তিনি যে জামশেদ নাসিরির পুত্র।

আশির দশকের শুরুর দিকে কলকাতার ময়দান মাতিয়েছিলেন দুই ইরানিয়ান ফরোয়ার্ড জামশেদ ও মজিদ বিসকার। মজিদ দেশে ফিরে গেলেো ,জামশেদ কলকাতাতেই রয়ে যান। এখনও সপরিবার থাকেন এই শহরেই। তিনিই ভারতে খেলতে আসা প্রথম বিদেশি ফুটবলার, যিনি এ দেশের বিভিন্ন ক্লাব টুর্নামেন্টে একশো গোল করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬— এই সাত বছর কলকাতার ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেন তিনি। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে দু’ দফায় ৬৪ গোল ও মহমেডানে চার বছরে ৫৮ গোল করেন তিনি। সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামশেদ। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে একাধিক ডার্বি খেলেছেন তিনি। বাবার দেখানো সেই পথই অনুসরণ করছেন কিয়ান। কিন্তু তাঁর সামনের পথ বেশ কঠিন। বাবার মুখ থেকে শুনেছেন ডার্বির অনেক গল্পও। এই প্রসঙ্গে কিয়ান বলেন, “বাবার কাছে ডার্বি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। কতটা তীব্রতা থাকে এই ম্যাচে ও কত উত্তেজনাপূর্ণ হয় ডার্বি, বাবার কাছে সবই শুনেছি। উনি সবময়ই চান, আমিও ডার্বিতে খেলি।“ তারকা-পিতার সেই ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ তাঁর সামনে।
শুক্রবার কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে একেবারে শেষ দিকে মাত্র দু’মিনিটের জন্য রয় কৃষ্ণার জায়গায় কিয়ানকে নামান সবুজ-মেরুন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। শনিবার ডার্বিতে ২৫ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ডকে নামার সুযোগ দেবেন কি না হাবাস, তা তো সময়ই বলে দেবে। তবে সে দিন শেষ দিকে তাঁকে নামিয়ে যে পরখ করে নিলেন হাবাস, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ডার্বিতে যে কোনও সময়ে মাঠে নামার জন্য যে তিনি প্রস্তুত, তা জানিয়ে কিয়ান বলেন, “ডার্বিতে খেলার জন্য আমি তৈরি। যে কোনও সময়ে বললেই আমি মাঠে নামতে পারি। শুধু ডার্বি কেন, যে কোনও ম্যাচেই মাঠে নামতে তৈরি আমি। আমাদের সে ভাবেই অনুশীলন করানো হয়, যাতে যে কোনও দলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে সফল হতে পারি।“

বাবার নাম যেহেতু জামশেদ নাসিরি, তাই তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন অনেকে। যদিও অতীতের দিকপাল ফুটবলারদের পরবর্তী প্রজন্ম বেশিরভাগই সেই পথে হাঁটেননি। তবে কিয়ানের রক্তেই যেহেতু ফুটবল ছিল এবং যেখানেই গিয়েছেন, বাবার সাফল্যের কথা লোকের মুখে মুখে শুনেছেন, তাই ছোট থেকেই ফুটবল নিয়ে ছটফটানিটা তাঁর একটু বেশিই ছিল।

নিজেই সে কথা জানিয়ে বলেন, “ছোট থেকেই ফুটবল ভালবাসি আমি। এগারো বছর বয়স পর্যন্ত যেখানে সুযোগ পেতাম ফুটবল খেলতাম। ১২ বছর বয়সে জুনিয়র বাংলা দলে ডাক পাই। ১৩-য় মোহনবাগান যুব দলে সুযোগ আসে। ২০১৬-য় জুনিয়র আই লিগে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। পরে কলকাতা লিগে সিএফসি-র হয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে খেলার সুযোগ আসে। এর পরে মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের ডাক আসে এবং ২০১৯-২০ মরশুমে আই লিগের দলেও আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়। ওখান থেকেই আমার পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু হয়। ছোট থেকেই আমার বাবাও পরিবারের অন্যান্যরা ফুটবলকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ব্যাপারে খুবই উৎসাহ দেন আমাকে। ছোটবেলা থেকেই বাবার কোচিংয়ে ছিলাম। কোচ ও বাবার মধ্যে সবসময়ই একটা দূরত্ব বজায় রাখতেন তিনি। তবে সবসময়ই তিনি আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন, ভাল কিছু করলে প্রশংসাও করেছেন।“

কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য, বাবার খেলা কখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এই ইউটিউবের যুগেও না। জিজ্ঞেস করতে বললেন, “না বাবার খেলা দেখিনি কখনও। কোনও ক্লিপংসও পাইনি। বাবার বন্ধু ও অন্যদের কাছে থেকে বাবার খেলা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। তখন ফুটবল কীরকম ছিল, তা শুনে অবাকও হয়েছি।“