অঞ্জন চ্যাটার্জি, এনএফবিঃ
আসন্ন ডার্বির জন্য পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দলের ফুটবলারদের ওপরই ছাড়লেন এটিকে মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস, তাঁর দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র রয় কৃষ্ণা অন্তত সে রকমই দাবী করেছেন। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতে পরের ম্যাচের পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব নাকি কোচ তাঁদেরই দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
চলতি আইএসএল ৮-এর প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগান ৪-২ জয় দিয়ে শুরু করলেও দলের পারফরম্যান্সে পুরোপুরি খুশি হননি কোচ হাবাস। প্রথমার্ধে তারা ভাল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সে ঢিলেঢালা ভাব ছিল বলে মনে করেন তিনি। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে শনিবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামবে তারা। তারই প্রস্তুতি এখন চলছে সবুজ-মেরুন শিবিরে।
প্রথম ম্যাচের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কোচের সঙ্গে প্রায় একমত এটিকে মোহনবাগানের গোলমেশিন রয় কৃষ্ণা।
বুধবার এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সে দিন প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলেছিলাম। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের আরও মনোনিবেশ করে খেলা উচিত ছিল। তবে সে দিন আমাদের প্রথম ম্যাচ ছিল। আমাদের নিজেদের মধ্যে আরও ভাল বোঝাপড়া তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে যারা দলে নতুন যোগ দিয়েছে, তাদের সঙ্গে।“ এই প্রসঙ্গেই রয় কৃষ্ণা জানান, “কোচ আমাদের গত ম্যাচের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে পরের ম্যাচের জন্য একটা ভাল পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছেন। ম্যাচ ধরে ধরে এগোচ্ছি আমরা। পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল তৈরি করব।“
কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি থেকে আসা ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস। এছাড়া পেনাল্টি থেকে গোল করেন রয়ও , এই মরশুমের আগেই হায়দরাবাদ এফসি থেকে আসা গোয়ানিজ ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসোও অনবদ্য একটি গোল করেন। অবশ্য রক্ষণের ভুলে দু’টি গোল খেতেও হয় তাদের। তবে রয়, হুগোর জুটি সে দিন বেশ তৎপর ছিলেন এবং প্রচুর নিখুঁত গোলের পাস বাড়িয়েছেন হুগো। যা ভবিষ্যতে সবুজ-মেরুন শিবিরের শক্তি হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁর ও হুগোর এই সম্ভাব্য আক্রমণাত্মক জুটি সম্পর্কে রয় বলেন, “হুগো একজন প্লে মেকার। অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করে ও। আমাদের প্রথম ম্যাচে দারুন কিছু টাচ দেখা গিয়েছে ওর পায়ে। দুটো গোলও করেছে। ওর সঙ্গে খেলে দারুন উপভোগ করেছি। আশা করি, ওর সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করতে পারব এই মরশুমে।“
আক্রমণে তিনি নিজে, হুগো, লিস্টন ও মনবীরের চতুর্ভুজ যে পরের ম্যাচগুলিতে এটিকে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষদের বেশ চাপে রাখবে, তা প্রথম ম্যাচেই বোঝা গিয়েছে। গতবারেও যেমন আক্রমণে বেশির ভাগ চাপটাই রয় একা নিতেন, এ বার আর তা নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ফিজিয়ান তারকা বলছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, “বিপক্ষের দলগুলোর পক্ষে আমাদের অ্যাটাকারদের মার্কিং করা বেশ কঠিন হবে। কারণ, প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত ভাবে দক্ষ, আর যে কোনও সময়ই আমরা গোলের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারি। তাই বিপক্ষের রক্ষণকে আমাদের নজরে রাখতেই হবে। তবে এ জন্য যে আমার ওপর থেকে চাপ কমে যাবে, তার কোনও মানে নেই। আমার কাজ হল বিপক্ষের গোলের সামনে পাওয়া যে কোনও সুযোগকে গোলে পরিণত করতে সাহায্য করা। সেটাই করে যাব।“
গতবার দুই ডার্বিতেই তাঁর গোল ছিল। এবারও কি একই ছবি দেখা যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে হাবাসের দলের ‘গোলমেশিন’ বলেন, “সবার আগে আমার চেষ্টা থাকে দলকে জেতানোর। সে গোল করে হোক বা গোল করতে সাহায্য করে বা ডিফেন্স করে। দলের জয়টাই আমার কাছে প্রধান লক্ষ্য। অবশ্য গোলের সংখ্যা বাড়ানোও আমার কাছে ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ। প্রতি ম্যাচেই আমি উন্নতি করতে চাই।“
গতবারের এসসি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এ বারের লাল-হলুদ বাহিনীর অনেকটাই তফাৎ। একেই কোচ থেকে ফুটবলার, সবেতেই পরিবর্তন এসেছে। তার ওপরে এবারে দীর্ঘ প্রস্তুতিও নিয়েছে তারা। তারই প্রতিফলন এবারের দলে পড়েছে বলে মনে করেন রয়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রথম ম্যাচ দেখার পরে তাঁর ধারণা, “ওদের প্রথম ম্যাচ দেখেছি। এই মরশুমে ওদের দলটা ভাল। ওদের ব্যাকলাইন বেশ ভাল। তা ছাড়া গতবারের সেরা গোলকিপার অরিন্দম এবার ওদের দলে আছে। এটা ওদের একটা বাড়তি সুবিধা।“