ক্রীড়া

গত সাত ডার্বি হার ভুলে আজ জয়ের জন্য ঝাঁপাবেন স্টিফেন

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, এনএফবিঃ

প্রথমে কেরালা ব্লাস্টার্স ও পরে মুম্বই সিটি এফসি। সম্প্রতি তাদের এই দুই দলের বিরুদ্ধে পাওয়া সাফল্যই লাল-হলুদ শিবিরের চেহারা অনেকটা বদলে দিয়েছে। শনিবার বহু প্রতিক্ষীত ডার্বি, যে ম্যাচে গত দুই মরশুমে, এমনকী চলতি মরশুমেও, একটিও জয় নেই তাদের। তবু শনিবারের মহা দ্বৈরথ নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। তাঁর ধারণা, সম্প্রতি তাঁর দলের যা পারফরম্যান্স এবং সারা লিগে তারা যে রকম খেলেছে, তারপরে এটিকে মোহনবাগানের টানা ডার্বি জয়ের ধারাবাহিকতায় এ বার দাঁড়ি পড়তে পারে।

শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “আইএসএলে সব ম্যাচই কঠিন। তবে ডার্বির চেয়ে কঠিন কোনও ম্যাচই নয়। দু’পক্ষের সমর্থকদেরই আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা থাকে। এই ম্যাচের জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। গত সপ্তাহে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা ম্যাচ খেলেছি। ওদের ঘরের মাঠে ওদের হারানো, সত্যিই দিনটা আমাদেরই ছিল। ডার্বিতেও আমরা আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামব। তিন পয়েন্টের জন্য লড়াই করব।”

চলতি মরশুমে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কনস্টান্টাইন বলেন, “মুম্বইয়ের দু-তিনজন সেরা খেলোয়াড় সে দিন খেলেনি। তা সত্ত্বেও ওদের মাঠে ওদের হারানোটা যথেষ্ট কৃতিত্বের বলে মনে করি আমি। আমার মনে হয়, ওটা আমাদের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। এই মরশুমে কয়েকটা ম্যাচের কথা যদি মনে করা যায়, যেমন গত ডার্বিতে প্রথমার্ধে আমরাই আধিপত্য বিস্তার করেছিলাম। এফসি গোয়া, ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধেও দাপট দেখিয়েছিলাম আমরা। হায়দরাবাদ আমাদের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই কার্যত হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিল। ওদের কোচই বলেছে এ কথা। আমাদের প্রচুর সমস্যা সত্ত্বেও অনেকগুলো ম্যাচেই আমরা ভাল খেলেছি। কিন্তু লোকে এগুলো মনে রাখে না।”

প্রায় অভিযোগের সুরে ক্লেটন সিলভাদের কোচ বলেন, “যে ভাবে মাত্র ১২ জন ফুটবলার নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম আমরা, তা সবাই জানে। ৪ অগাস্ট যে জায়গায় ছিলাম আর এখন কোন জায়গায় আছি আমরা, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। সবার চেয়ে বেশি আমি চেয়েছিলাম, দল সেরা ছয়ে থাকুক। কিন্তু সে জন্য সঠিক পরিকল্পনাটাও কার্যকর করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি সুপার কাপে ও পরবর্তী মরশুমে আমরা এর চেয়ে অনেক ভাল খেলব।”

হিরো আইএসএলে টানা পাঁচবার ডার্বিতে হেরেছে তাঁর দল। তবে এই বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান না ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ। বলেন, “টানা পাঁচ ডার্বি হারের মধ্যে চারটি হয়েছিল জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে। সেগুলো একেকটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের মতো ছিল। গত দু’বছরে আমরা বলয়ের মধ্যে খেলে তিনটি ম্যাচ জিতেছি। আর এ বার স্বাভাবিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির মধ্যে খেলে ছ’টা ম্যাচ জিতেছি। এ বছর প্রথম ডার্বিতে প্রথমার্ধে আমরাই আধিপত্য বিস্তার করেছিলাম। সম্প্রতি মুম্বই ছাড়াও কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়েছি। এখন আমাদের আত্মবিশ্বাসের স্তর সঠিক জায়গায় রয়েছে। তবে আমাদের ঔদ্ধত্য নেই। কাল আমরা তিন পয়েন্টের জন্য অবশ্যই লড়ব।”

YouTube player

সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাল বলে শনিবারের ফুটবল-যুদ্ধে নিজেদের এগিয়ে রাখতে নারাজ কনস্টান্টাইন। বলেন, “ডার্বিতে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থেকে নামে না। এটা এমন একটা বিশেষ ম্যাচ, যেখানে কে কীরকম ফর্মে আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আইএসএলে এটাই আমাদের সেরা মরশুম। আমরা যা খেলেছি, তাতে সেরা ছয়ে থাকা উচিত ছিল আমাদের। এ বছর আমরা শুধু ভিত তৈরি করেছিলাম। পরের মরশুমে এই ভিতের ওপর আমরা সাফল্যের ইমারত তৈরি করব। সে জন্য আরও খেলোয়াড় দরকার। তরুণ ও তাজা খেলোয়াড় দরকার”।

শনিবারের ম্যাচে কোন বিষয়গুলি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে, তা জানতে চাওয়া হলে কনস্টান্টাইন বলেন, “জেতার অদম্য ইচ্ছা, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ক্ষমতা এগুলোই এই ম্যাচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোই দুই দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দেয়। যে লিগ টেবলের যেখানেই থাকুক না কেন, তাতে কিছু এসে যায় না। একটা ডার্বি জয়ের গৌরব, যা নিয়ে তার পরের দু-তিন মাস পর্যন্ত চর্চা চলে, তা অনন্য। আমরা সেই চেষ্টাই করব”।

এটিকে মোহনবাগানের তিন বিদেশি হুগো বুমৌস ও কার্ল ম্যাকহিউ এই ডার্বিতে অনিশ্চিত। কার্ড সমস্যার জন্য নেই ব্রেন্ডান হ্যামিলও। তবে এ সব খবরে খুব একটা আগ্রহী নেই বলেই জানান লাল-হলুদ শিবিরের হেডস্যার। সাফ জানিয়ে দেন, “প্রতিপক্ষের কোন খেলোয়াড় খেলবে বা খেলবে না, এই নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমাদের কে কে খেলছে আর আমরা কতটা প্রস্তুত, এই নিয়েই আমাদের আগ্রহ বেশি। এটিকে মোহনবাগান প্লে অফে জায়গা করে নিয়েছে, সে জন্য ওদের অভিনন্দন। কিন্তু ওরা কাদের কাদের খেলাবে না, তার পরোয়া করি না। আমার লক্ষ্য এই ম্যাচ জেতা। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়”।

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।